প্রাচীন উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু মঠ বিক্রমপুরের শ্যামসিদ্ধির মঠ

1810
প্রাচীন উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু মঠ বিক্রমপুরের শ্যামসিদ্ধির মঠ

অতি প্রাচীন জনপদ বিক্রমপুর, বর্তমানের মুন্সীগঞ্জ। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থানের কারণে মুন্সীগঞ্জের পরিচিতি দেশব্যাপী। এখানকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে নানান প্রাচীন স্থাপনা। ফেলে আসা সময়ের বা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্যামসিদ্ধির মঠ এবং সোনারং জোড়ামঠ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে । প্রথমটি শ্রীনগর উপজেলায় আর অন্যটি টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত।

শ্যামসিদ্ধির মঠ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত শ্যামসিদ্ধির মঠ। ১৭৫৮খ্রিস্টাব্দে শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে শম্ভুনাথ স্বপ্নে তার স্বর্গীয় বাবার চিতার ওপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পেয়ে তিনি এই স্থাপনা তৈরি করেন। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লির কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই এটি ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। অষ্টভুজ আকৃতির এ মঠের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ২১ ফুট।

মঠের পুরনো নকশা করা কাঠের দরজা- জানালা, মূল্যবান পাথর, পিতলের কলস চুরি হয়ে গেছে বহু আগে। ১৯৯৫ সালে চুরি হয়ে যায় মঠের ভেতরে রাখা তিন ফুট উঁচু কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ। মঠের উপরের দিকে বাইরের দেয়ালজুড়ে অনেক ছোট ছোট খোপ রয়েছে। যেগুলোতে বাসা বেঁধেছে শত শত টিয়া আর শালিক। তাই মঠটি সবসময়ই পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।

সংস্কার করার নামে শ্যামসিদ্ধির মঠের সৌন্দযের্র কিছুটা ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে। মঠের নিচের অংশে ভিতর এবং বাইরে সিরামিক টালি দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। যার ফলে মঠটি হারিয়েছে তার আদি সৌন্দর্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রাচীন স্থাপনাটি দেখতে এখনো দেশি-বিদেশি অনেক মানুষ প্রতিদিন ভিড় করে শ্যামসিদ্ধির গ্রামে।

অন্য খবর  ডিসেম্বরে বাংলা সাজে পতাকায়

সোনারং জোড়া মঠ সোনারং জোড়া মঠ মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কালজয়ী বাঙালি সত্যেন সেনের সোনারং গ্রামে অবস্থিত। সোনারং জোড়া মঠটি ইতিহাসে জোড়া মঠ হিসেবে পরিচিত লাভ করলেও মূলত এ দুটি জোড়া মন্দির। বড়টি কালী মন্দির আর ছোটটি শিবমন্দির । তাই এই মঠ দুটিকে জোড়া মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। রূপচন্দ্র নামের এক হিন্দু বনিক তাঁর মা ও বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে এই মন্দির দুটি নির্মাণ করেন। পাশাপাশি দুটি মঠ হলেও একটি বড় ও অপরটি সামান্য ছোট। বড়টির উচ্চতা ১৫ মিটার। বড়টি পশ্চিম পাশে এবং ছোটটি পূর্ব পাশে অবস্থিত।

বড়টি রূপচন্দ্র তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৮৪৩ সালে নির্মাণ করেন। অপরটি নির্মাণ করেন ১৮৮৬ সালে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। চুন-সুড়কি আর ইট দিয়ে তৈরি এই স্থাপনা দুটিরই প্রধান উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বারান্দা। মন্দির দুটির বারান্দা যথাক্রমে ১.৯৪ ও ১.৫ মিটার।

জোড়া মঠের দক্ষিণ পাশের বিশাল শান বাঁধানো পুকুর এবং ঘাট মন কাড়ে। বড় মন্দিরটি তৈরির সময় এ পুকুর খনন করা হয়েছিল বলেই ধারণা করা হয়। সোনারং জোড়া মন্দিরের স্থাপনা থেকেও অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে বিভিন্ন সময়ে। মন্দিরটির নিচের দিক থেকে সামান্য উঁচুতেই কারুকাজের মধ্যে তামার নানা নকশা ছিল। এই নকশার সঙ্গে ধাতব বস্তুর নকশাও ছিল।

অন্য খবর  অমর সাহিত্য ড্রাকুলা

মন্দিরের ভেতরেও ছিল পাথরের মূর্তি। সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরের শিখরে অবস্থিত ত্রিশুলটি বাঁকা হয়ে আছে। ত্রিশুলটি অনেক উপরে থাকার কারণে কয়েকবার চুরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।

এই মন্দিরের উপরে দিকে রয়েছে ছোট ছোট বহু ছিদ্র।এই ছিদ্রগুলোকে নিজেদের বাসা বানিয়ে ফেলেছে ঘুঘু, শালিক ও টিয়াসহ নানা জাতের পাখি। এ কারণেই সোনারং জোড়া মঠ পাখির কলকাকলিতে সর্বদাই মুখরিত থাকে। সোনারং জোড়া মঠের সৌন্ধর্যের সাথে হরেক রকম পাখির গান আর দুষ্টুমিতে আপনার মন নিশ্চিত ভালো হয়ে যাবে।

ঢাকার গুলিস্তান থেকে অনেক বাস আছে যেগুলো শ্রীনগর যাতায়াত করে। শ্রীনগর বাজার থেকে রিকশায় করে যাওয়া যায় শ্যামসিদ্ধির গ্রাম। শ্যামসিদ্ধির মঠ দেখে আপনি অটো রিকশায় করে চলে যেতে পারবেন টঙ্গিবাড়ী সোনারং জোড়া মঠ দেখতে। সোনারং জোড়া মঠ দেখে আপনি টঙ্গিবাড়ী থেকেও বাসে চড়ে ঢাকায় ফিরতে পারেন আবার শ্রীনগর হয়েও ফিরতে পারবেন। তবে টঙ্গিবাড়ী থেকে ঢাকার রাস্তা খুব বেশি ভালো নয়, তাই শ্রীনগর হয়ে ফেরাই ভালো।

আপনার মতামত দিন