শরিফ হাসান ও মোঃ আল-আমিন, নিউজ৩৯: বুধবার প্রথম কোন ভারতীয় হাই-কমিশনার হিসাবে রিভা গাঙ্গুলী দাস দোহারে গান্ধী আশ্রম পরিদর্শন করেন। মূলত এটি ছিলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ভারতীয় হাই-কমিশনারের বিদায়ী সাক্ষাতকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিদায়ী সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে তাকে প্রস্তাব দেন, দোহারে সাক্ষাৎকার প্রোগ্রাম করতে। কেননা ভারতীয় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী ও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে দুদেশেই একইসাথে। আর মহাত্মা গান্ধী ১৯৪০ সালে এই দোহারের মালিকান্দায় অসহযোগ আন্দোলনের কর্মিদের চিকিৎসার জন্য নির্মাণ করেন এই গান্ধীসেবা আশ্রম। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবংগের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষেরও জন্মস্থান দোহারের মালিকান্দায়।
ভারতীয় হাই-কমিশনার রিভা গাংগুলি দাস বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে ইচ্ছ্বে করছে না। কারণ আমাদের দু’দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক খুবই গভীরে এবং আন্তরিকতাপূর্ণ। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে গান্ধীজি দোহারে দু’বার এসেছেন; আমিও সেখানে আসতে পেরেছি। আর এই বাংলাদেশে থেকেই আমি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত হয়েছি । তাই এটি খুবই লাকি স্থান আমার জন্য।
রিভা গাংগুলি বলেন, খুব কঠিন গান্ধীজির পথে চলা। এটা খুব শক্ত উনার আদর্শ মেনে চলা, অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা। খুব শক্ত নিজের জীবনে প্রয়োগ করা গান্ধীজির আদর্শ। কিন্ত যারা সেই আদর্শ অনুসরণ করে , তারা সবার কাছেই খুবই সম্মানীত । দোহারের জনগণের পক্ষ থেকে একটি গান্ধিজির ইন্সটিটিউশনে্র দাবী উঠেছে, সেটি আলোচনা করে আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো শীঘ্রই।
সীমান্ত হত্যা বিষয়ে তিনি আরো বলেন, এই কিছুদিন আগেই বিজিব ও বিএসএফ মিটিং করেছে। আমি আত্মবিশ্বাসি যে, এই বিষয়টি দ্রুতই সুষ্ঠু সমাধান হবে। আর ভবিষ্যতেও আমি আমার দিক হতে সম্পূর্ণ সহযোগীতা অব্যাহত রাখবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা মহাত্মাগান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত এই গান্ধী আশ্রমে ভারতীয় হাই-কমিশনার আসায় আমরা গর্বিত। আমার সাথে তার সাক্ষাৎকার ছিলো ঢাকায়। কিন্ত আমি তাকে এখানে আসতে বললাম; তিনিও রাজী হয়ে গেলেন। আমি তাকে গান্ধীজির আশ্রম দেখাতে এবং তার স্মৃতি বিজড়িত স্থানে যেন ভারত সরকারের সহযোগিতা থাকে, তাই আমি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছি দোহারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঢাকা -১ সাংসদ সালমান এফ রহমান, দোহার উপজেলার সুযোগ্য চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে একটি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেটি সম্মানীত হাই-কমিশনারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সেটি বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত পুরোনো, পরীক্ষিত এবং গভীর। আমরা সবসময় একসাথেই থাকতে চাই। আমার পক্ষ থেকে শুভ কামনা করছি ভারতীয় হাই – কমিশনারের নতুন পদোন্নতি। আশা করছি তার নতুন দায়িত্বের মাধ্যমে তিনি ভারত – বাংলাদেশেকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য দোহার উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের মধুরচর এলাকায় অবস্থিত গান্ধীজী আশ্রম। ১৯৪০ সালে ভারতের জাতির জনক মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে মহাত্মা গান্ধী দোহারের এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫শে ফেব্রুয়ারি এই আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন। সেসময় তার সাথে ছিলেন মালিকান্দা-মেঘুলার সন্তান পশ্চিম বংগের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী (২বার নির্বাচিত) প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ।
মহাত্মা গান্ধী আশ্রমের রয়েছে চার একর জমি। আর অনেক দিন ধরেই এই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, দোহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, দোহার থানা পুলিশের ওসি মোস্তফা কামালসহ দোহার নবাবগঞ্জের স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ , রাজনৈতিক নেতা-কর্মি ও সাধারণ জনগণ।