দোহারে পদ্মায় ভাঙছে বসতি; বাস্তবায়িত হয়নি বেড়িবাঁধ

বর্ষা মৌসুম এলেই ঢাকার দোহারের পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বেড়ে যায়। কেননা প্রতি বছরই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত ৫ বছরে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে হাতনী, পানকুন্ড, ধোয়াইর, অরঙ্গাবাদ, বালেঙ্গাসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার পরিবার। অনেক অসহায় পরিবারের আশ্রয় হয়েছে রাস্তার ধারে। সব হারিয়ে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। কারও আশ্রয় মিলেছে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।

অন্যদিকে, গত বছর দোহারের ভাঙনকবলিত এলাকায় ৭৫ কিমি স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে পাস হয়। কিন্তু গত শুষ্ক মৌসুমেও এর কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ভাঙন এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের ঝড় বইছে।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর গ্রাম সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী নারিশা পশ্চিমচর গ্রামের ১৫টি পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে মেঘুলা বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা ও মধুরচরে ২ শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। চর বিলাশপুর ও মুকসেদপুরের আরও ২০টির মতো ঘরবাড়ি পদ্মায় চলে গেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছে এলাকার অসহায় মানুষ। যেন তাদের দেখার কেউ নেই। দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে আরও কয়েক হাজার পরিবার।

অন্য খবর  নারিশায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীর মৃত্যু

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘুলা বাজার দক্ষিণে রানীপুর গ্রামের ব্রিজটির অধিকাংশই পানির নিচে ডুবে রয়েছে। বাকি অংশ ওপরের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, গত ২ বছরে প্রায় ২ হাজার পরিবারের বসতভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো সর্বস্ব হারিয়ে দুখে কষ্টে জীবন কাটছে।

রানীপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান বলেন, গত বছরের অক্টোবরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক কাজ করছে।

নারিশা পশ্চিম চর গ্রামের আতাউর রহমান জানান, গত বছর ভাঙনের পর তার বাড়ির কিছু অংশ ছিল এ বছর পুরো বাড়ি গিলে খেয়েছে পদ্মা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রয়োজনে আসেন। সান্ত¡না দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাহ্মুদপুরের পুরুলিয়া থেকে নারিশা ইউনিয়নের পূর্বচর পর্যন্ত নদী পারের প্রায় ২টি গ্রাম পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এলাকাবাসী সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন।

নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন দরানী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকা পরিদর্শনও করেছে। জরুরি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

অন্য খবর  আড়িয়াল বিল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সনদ বিতরন

দোহার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শামীম আরা নিপা বলেন, নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করার কথা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও অবগত করা হয়েছে।

আপনার মতামত দিন