ইতিহাসের সফল নারী শাসক

ইতিহাসের পাতায় সফল শাসক বা বীর শাসকের তকমাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাগানো হয়েছে পুরুষের পেছনে। কিন্তু ইতিহাসে এই পুরুষদের আড়ালে এমন অনেক নারী শাসকও রয়েছে যারা কিনা নিজেদের শৌর্য আর সুকৌশলী বুদ্ধির দ্বারা সফলভাবে রাজ্য শাসন করেছেন, দেশ জয় করেছেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছড়িয়ে গিয়েছেন পুরুষকেও। কিন্তু তাদের নাম বেশিরভাগ সময়েই রয়ে গিয়েছে অন্তরালে। হারিয়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে। চলুন দেখে আসি সেই সফল নারী শাসকদের কয়েকজনকে।
১. আমিনা: ১৬ শতকে জন্ম নেওয়া আমিনা নামের এই নারী ছিলেন অসীম সাহসী, অসম্ভব শক্তিশালী যোদ্ধা, সামরিক নেতা এবং খুব সম্ভবত বর্তমান নাইজেরিয়ায় অবস্থিত তত্কালীন জাজ্জাওয়ের ( যাকে আমরা এখন জারিয়া বলে চিনি ) শাসক। প্রাচীন শাসক বাকওয়া তুরুনকুর বড় মেয়ে হওয়ায় বংশগতভাবে সিংহাসনে বসেন আমিনা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। একটু একটু করে বাড়িয়ে তুলেছেন নিজের এলাকা। ধারণা করা হয় যে, নিজের সিংহাসনের ওপর একচ্ছত্র মালিকানা রাখতেই কখনো বিয়ে করেননি আমিনা। চাহিদা মেটানোর জন্যে দেহরক্ষকদের ভেতর থেকে পুরুষ বাছাই করতেন তিনি। সেটাও কেবল এক রাতের জন্যে। রাত শেষে মেরে ফেলা হত রক্ষীকে। তবে দূর্ভাগ্যক্রমে একবার এক রক্ষী সকালবেলায় পালিয়ে যায়। আর তাকে হত্যা করতে গিয়ে মারা পড়েন আমিনা।

অন্য খবর  আজ ১৬ মার্চ;৭১ এর এই দিনে

২. জো পোরফিরোজেনিটা: অষ্টম কন্সটেন্টাইনের মেয়ে জো পোরফিরোজেনিটা এবং তার স্বামী তৃতীয় রোমানোস যৌথভাবে বাইজেন্টাইনের সিংহাসনে বসেন। অবশ্য কিছুদিন পরেই রোমোনোসের মৃত্যু হয় এবং তার পেছনে জো আর তার প্রেমিক চতুর্থ মাইকেলের হাত ছিল বলে মনে করা হয়। অবশ্য কিছুদিন পরেই বিয়ে করে নেন তারা আর এক পুত্র সন্তানকে দত্তক নেন। মাইকেল মারা গেলে জোকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে একাই বেশ জাঁকিয়ে বসে ছেলে পঞ্চম মাইকেল। অবশ্য নাগরিকরা জোকে এতটাই ভালোবাসতো যে তারা মাইকেলকে সরিয়ে বার জোকেই ফিরিয়ে আনে। তবে জোয়ের মন ততদিনে সিংহাসন থেকে উঠে গিয়েছিল। নিজের তৃতীয় স্বামীর হাতে সিংহাসনের ভার দিয়ে তাই অনেকটা দূরে চলে যন তিনি।

৩. সুইডেনের রানী ক্রিস্টিনা: রাজা দ্বিতীয় গুস্তাভ অ্যাডলফের মৃত্যুর পরে মাত্র ছয় বছর বয়সে সিংহাসনের ক্ষমতা পান ক্রিস্টিনা। কিন্তু সিংহাসনে বসেন তিনি ১৮ বছর বয়সে। অল্প বয়সে সিংহাসনে বসে বেশ ঘাবড়ে যান তিনি। রাজ্য পরিচালনায় বেশ দূর্বলতা দেখা যায় তার। ফলে একটা সময় রাজ্যের শাসনক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে রোমে চলে যান ক্রিস্টিনা। আর সেখানেই বাকীটা জীবন কাটান তিনি। দেশের ভালোর জন্যে যোগ্য শাসকের হাতে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে শাসনক্ষমতা হস্তান্তরিত করেন ক্রিস্টিনা।

অন্য খবর  অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক

৪. রাণী লক্ষী বাঈ: ছোটবেলাতেই কী করে যুদ্ধ করতে হয়, মার্শাল আর্ট আর তরোয়াল চালনা, রাজ্য চালনা- সবটাই শিখে নিয়েছিলেন লক্ষী বাঈ। তার এই সব শিক্ষাই কাজে আসে যখন উত্তর ভারতের ঝাঁসির রাণী হিসেবে সিংহাসনে বসেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর ইংরেজরা লক্ষী বাঈয়ের দত্তক নেওয়া সন্তানকে রাজা হিসেবে মানতে রাজী ছিলনা। ফলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন এই নারী। যদিও তার শক্তি খুব তুচ্ছ ছিল ইংরেজদের সামনে, তবুও ২২ বছর বয়সী এই নারী অসীম সাহস নিয়ে নিজের শেষ শ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করেন।

আপনার মতামত দিন