কাজী সোহেল♦ নদীর নাম ইছামতী। এক সময় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ হয়ে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান পর্যন্ত এই নদীতে লঞ্চ চলত। এখন নৌকাও চলতে পারে না। কোথাও একদম পানি নেই, কোথাও হাঁটু-পানি থাকলেও কচুরি পানায় ঢেকে আছে। হাজা-মজা এই নদী এখন মশার বসতি।
পদ্মা নদী থেকে ইছামতীতে পানি প্রবেশের যেসব খাল ছিল, সেগুলো বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি। এখন শুধু ভরা বর্ষায় ইছামতীতে ধলেশ্বরী নদীর পানি ঢুকলেই কিছু নৌকা চলতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান খন্দকার সামসুদ্দোহা বলেন, সরকারের নদী খনন প্রকল্পের ইছামতী প্রথম তালিকায় আছে। ইছামতী নদী খননে ড্রেজার পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে তা বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাবেক গণ-পরিষদের সদস্য ও নবাবগঞ্জের বাসিন্দা সুবেদ আলী টিপু বলেন, ১৯৭২ সালে কোমরগঞ্জ থেকে মরিচা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়েছিলো। ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়। ফলে ঢাকার সঙ্গে কলাকোপা বান্দুরার নদীপথের দূরত্ব কমে আসে। সারা বছর নৌযান চলাচল করত ইছামতীতে। পরে ১৯৭৭ সালে তত্কালীন ঢাকা-১-এর সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন নরুল হক ইছামতী নদী খনন করে ছিলেন।
এ অঞ্চলের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, ১৯৯৬ সালে সরকার ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে দোহারের অরঙ্গবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাট-পাড়া বংখুরী পর্যন্ত ১৩ কিমি বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ইছামতির সঙ্গে পদ্মার সংযোগ খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, পদ্মার সঙ্গে যুক্ত নবাবগঞ্জের সাদাপুর খাল, আড়িয়ল বিলের গোবিন্দপুর খাল, কার্তিকপুর ও কাশিয়াখালী বাঁধ দিয়ে ইছামতিতে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ স্থানেই নদী শুকিয়ে গেছে। তবে নদীর সৈয়দপুর, মরিচা, ভাঙ্গাভিটা, হরিস্কুল, কলাকোপা পোদ্দার বাজার, ধাপারী, গোল্লা, গোবিন্দ পুর, বান্দুরা, নয়ানগর, বারুয়াখালী ও শিকারী পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সামান্য পানি জমে আছে। তবে সেসব স্থান কচুরিপানা ও মশার ডিপোতে পরিণত হয়েছে।
বান্দুরা বাজারের ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন হালদার বলেন, আগে নৌপথে কম খরচে বেশি মালামাল বহন করা যেত। এখন সড়ক পথে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ তার ওপর চাঁদা প্রদানসহ নানা কারণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। এতে ব্যবসায় লাভ হচ্ছে খুব কম। পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। নদী খনন করা হলে স্বল্প খরচে নৌযানে মালামাল বহন করা যাবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শহীদ-উল্লাহ বলেন, ইছামতী নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখতে পরিকল্পিত খনন করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, ইছামতী নদী খননের বিষযটি সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। ঢাকা-১ আসনের এমপি এডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে।