৩ বছরেও পূর্ণতা পায়নি দোহারের পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর

497

নিউজ৩৯♦ দীর্ঘ প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও আজও পুর্ণতা পায়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ঢাকার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের পোদ্দার বাড়িতে স্থাপিত একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর। আশ্বাসের পরও র্দীঘ এ সময়ে সরকারি আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়ায় চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দোহার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও পোদ্দার বাড়ি স্মৃতি জাদুঘরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা।

 

পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা সমিতি জাদুঘরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যে সুত্রে জানা যায়, টাকার অভাবে পোদ্দারবাড়ি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরের কাজ সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। সরকারি বরাদ্দ পেলে এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যেত।

জানা যায়, ২০১২ সালে ১৪ মার্চ পোদ্দার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর এর কাজ সম্পন্ন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সাবেক নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমীন এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের দোকান বিক্রয় বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা এ পর্যন্ত এর আংশিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আর্থিক সংকটে এর অবশিষ্ট কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এর উন্নয়নে দ্রুত সরকারি বরাদ্দের দাবি জানান।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত

বর্তমানে পরিত্যক্ত বাড়িটি অরক্ষিত থাকায় স্থানীয় বখাটে ও মাদকসেবীরা এখানে মাদক ও নানা অপকর্ম করা বলে জানিয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমরা সব কিছু জানালেও এর কোন প্রতিকার করতে পারছিনা। প্রতিকার করতে হলে অতিদ্রুত এর বাকি উন্নয়ন কাজ শেষ করা জরুরী। কিন্তু টাকার অভাবে তা আর হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করেন, একটি কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এর উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী খান অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ তিন বছরের সরকারি কোন আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরটির উল্লেখ্যযোগ্য কোন উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার স্মৃতি জড়িত এই বাড়িটির সাথে। এখান থেকেই আমরা পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তির সংগ্রাম ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমরা চাই এর অবশিষ্ট কাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয়। তিনি বিজয়ের ৪৩ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এই স্থাপনাটি রক্ষার্থে একই দাবি জানান।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে দোহার উপজেলার এই বাড়িটির ভিতরে অবস্থান করে ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ ও মনিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা সুসংগঠিত হয়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতেন।

অন্য খবর  শিক্ষার আলো দিয়েই ছাত্ররা দেশকে উন্নয়ন করবেঃ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান

স্থানীয়রা তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের গোত্রের (বংশ) নামানুসারে সবাই একে পোদ্দারবাড়ি বলে চিনেন। পোদ্দারদের অগাধ সম্পতি আর আর্থিক অবস্থা উন্নত হওয়ায় এলাকায় তাদের উল্লেখ্যযোগ্য প্রভাব ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন পাকহানাদার বাহিনী দোহার উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালালে পোদ্দাররা তাদের পৈত্রিক বাড়ি ও অগাধ সম্পতি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ ভরতে চলে যায়। এরপর পরিত্যক্ত এই বাড়িটি হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাটি।

পোদ্দারবাড়ি যুদ্ধের পর হতে সরকারি সম্পত্তিটি হিসাবে বিবেচিত হয়। আর এখানে অবস্থান করতেন সরকারি সব আমলরা। র্দীঘদিন এখানে তফসিল অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ সপরিবারে বসাবাস করতেন। কিন্তু হঠাৎ স্থানীয় এক বাসিন্দা সরকারি সম্পত্তিটি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাতে বাধাঁ দেন। কেননা বাড়িটি ঘিরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি। তাই এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে গত ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধোদের আবেদনের প্রেক্ষিত সাবেক দোহার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর করার ঘোষণা দেন এবং সে অনুযায়ী পোদ্দারবাড়ি বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত।

দোহার উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল কবীর ভূঁইয়া বলেন, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত দিন