আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, দুর্নীতিবাজ বলে এস কে সিনহার সঙ্গে বসতে ও আদালত চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তার আপিল বিভাগে ভ্রাতৃতুল্য বিচারকগণ। যখন এরা বারবার বলেছেন আমরা আর আপনার সঙ্গে বসবো না তখনই তিনি অন্য উপায় না পেয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এস কে সিনহা পদত্যাগের প্রায় এক বছর পরে তিনি এসে নতুন গল্প সৃষ্টি করেছেন। এটা আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি যে, এটা হচ্ছে একজন পরাজিত ব্যক্তির হা হুতাশ। আর শেষ কথা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে তিনি আজকে যা বলছেন তা সর্ববৈ মিথ্যা।’
রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত প্রাঙ্গনে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির অভিষেক ও নতুন ডিজিটাল বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, অনেকেই বলছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। আমি শুধু তাদেরকে বলে দিতে চাই। ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একটা এফআইআর হয় নাই। তখন বুঝি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল? আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন তখন বুঝি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল?
আইনমন্ত্রী প্রশ্ন করে বলেন, এক কলমের খোঁচায় একজনকে প্রধান বিচারপতি বানানোর জন্য ৬৫ কে ৬৭টি বানিয়ে দিলেন। তখন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল? আর যখন যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধে জন্য দায়ী তাদের বিচার হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয় যখন দুর্নীতিবাজদের বিচার হয় তখন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আপনারা দেখতে পান না। বলতে পারি বিচার বিভাগ এখন যত স্বাধীন ১৯৭৫ সাল থেকে তাদের সময় এতো স্বাধীন ছিল না।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা করতে হয়েছে। আর সেইদিন থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। সংবিধানের বাইরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছুই করবেন না। সেটা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই। যেই যারা সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলছে যারা সংবিধান পরিপন্থী ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করছে। তাদের বলে দিতে চাই- আসুন আপনারা ডিসেম্বরের নির্বাচনে।
তিনি বলেন, জনগণ যদি আপনাদের গ্রহণ করে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আর জনগণ যদি আমাদের গ্রহণ করে তাহলে আপনারা কোনো কথা বলতে পারবেন না। আসেন আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করবো। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশনার।
মন্ত্রী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের বার ভবনের জন্য পিডিবি আর এনবিআরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এখানে ৫ কোটি টাকা লাগবে। ৫ কোটি টাকার মধ্যে এমপি সেলিম ওসমান দেবেন ৩ কোটি টাকা, আইন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া হবে ১ কোটি আর এমপি গাজী দেবেন ১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, দুই আদালত একসঙ্গে রাখার ব্যাপারে অনেক জেলায়ই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এক আদালত থেকে আরেক আদালতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই সমস্যার সমাধান দ্রুত করার চেষ্টা করবো এবং দুই কোর্ট একসঙ্গে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে।
সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের সভাপতিত্ব ও সেক্রেটারি মোহসীন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, আইজি আর ড. খান মোঃ আব্জেদুল মান্নান, জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমান, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালহে শেখ মুহাম্মদ জহিরুল হক, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) বিকাশ কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।