ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা মারা গেছেন। রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের কাছে তিনি ‘আম্মা’ নামেই পরিচিত। জয়ললিতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জয়ললিতা ৬৮ বছর বয়সে চেন্নাইয়ের অ্যাপলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন জয়ললিতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
মধ্যরাতে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, জয়ললিতা সোমবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।’
রবিবার বিকেল পাঁচটায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন জয়ললিতা। তখন তিনি চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় জয়ললিতাকে।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জয়ললিতা। তারপর অবস্থার অবনতি হয় তার। দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর সেরেও ওঠেন। জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। দলের তরফে যেদিন তার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার খবর ঘোষণা হয়, সেদিনই বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি।
তামিলনাড়ুতে সমর্থকদের কাছে জয়ললিতা ‘আম্মা’ হিসেবে পরিচিত। তার মৃত্যুতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক শোকের সঞ্চার হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। হাসপাতালের বাইরে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত-সমর্থক।
ভক্তদের আম্মা পুরাচ্চি থালাইভি, বা বিপ্লবী নেত্রী নামেও পরিচিত জয়ললিতা ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহীশূরের মেলুকোটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের নায়িকা। নায়ক-রাজনীতিক এম জি রামচন্দ্রণের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই রাজনীতিতে অভিষেক তামিলনাড়ুর প্রিয় ‘আম্মা’র।
১৯৮২ সালে এআইএডিএমকে দলে যোগ দেন জয়ললিতা। ১৯৮৪ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। রামচন্দ্রণের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হন রামচন্দ্রণের স্ত্রী।
জয়ললিতা বিরোধী দলনেতা হন ১৯৮৯ সালে। পরে ১৯৯১ সালে প্রথম বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। তিনি ছিলেন তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ পান ২০০১ সালে। কিন্তু পরে ২০০১ সালে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছাড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীর পদ।
২০০৩-এ জয়ললিতা ফের ফেরেন মুখ্যমন্ত্রিত্বে। ২০১১ সালে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন জনতার ‘আম্মা’ ও এআইএডিএমকে নেতা।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে ৪ বছরের জেল হয় জয়ললিতার। খোয়ান মুখ্যমন্ত্রী পদও। একমাস পর ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর ২০১৫ সালের ১১ মে কারাদণ্ড মওকুফ করে কর্ণাটক হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন জয়ললিতা। একইদিনে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রিত্বে ফেরেন তিনি। পরে ২০১৬ সালে চতুর্থ বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তামিল জনগণের ‘আম্মা’।