একদিকে নদীভাঙন, অপরদিকে নদীতে প্রভাবশালীদের মাটি খনন করে বিক্রি। দুটোই এখন কৃষকদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চক পালপাড়া এলাকার কালিগঙ্গা নদীর এমন চিত্র।
ভুক্তভোগীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১ মাস ধরে চলছে পালপাড়া মৌজায় নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার উৎসব। স্থানীয় সরকারি দলের নেতারা মাটি কেটে বিক্রি করছে। শুরুতে বিএনপি সমর্থিত কর্মীরা তাদের মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করলে এখন ক্ষমতাসীনদের দাপটে তারা এলাকা ছাড়া। তাদের পরিবর্তে এখন কাটছে সরকারি দলের অনেক সমর্থক ও কর্মী।
সূত্র মতে, চান্দহর ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চক পালপাড়া গ্রামের আ. কুদ্দুসের ছেলে সেলিম (২৮), মজিদের ছেলে মিন্টু (৩২), আনোয়ার, চান্দহর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নাসির (৩৮) ও ওয়াইজ নগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর সদস্য মনির হোসনের নেতৃত্বে মাটি কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টায় পর্যন্ত চলে মাটি কাটা কর্মক্রম। সূত্র আরো জানায়, প্রায় ২০-৩০টি ট্রলার ভর্তি করে কাটা মাটি নারায়ণগঞ্জের জাজিরা ইটের ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন প্রভাবশালীরা। আর চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন আশপাশ ফসলির জমির মালিকরা। স্থানীয় কৃষক আ. কুদ্দুস (৮০), আক্তার হোসেন (৩৮), ফরহাদ (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, আমরা চেষ্টা করেও সরকারি দলের নেতাদের দাপটে মাটি কাটা বন্ধ করতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদলকে জানিয়েও ফল পায়নি।
তাদের অভিযোগ, ক্রমাগত মাটি কেটে নেয়ার ফলে হেলাল বেপারির বরই বাগানের ১ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। তার বাকি ৬ বিঘা জমি এখন হুমকির সম্মুখীন। পালপাড়া গ্রামের জলিলের ৪ বিঘা জমির পূর্ব-পশ্চিম পাশ থেকে গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নিতে তিনি বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে ঘুরে ঘুরে এখন ক্লান্ত। উল্টো হুমকির মধ্যে রয়েছে আছেন জলিল অভিযোগ করেন। কুদ্দুস, হেলাল, বিশা শেখ ও জলিলের মতো অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের ফসলি জমি নিয়ে রয়েছেন আতঙ্কিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালীরা শুধু ট্রলার দিয়ে নয়, ড্রেজার দিয়েও ওই নদী থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। পাশ্ববর্তী ঢাকার জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার সরকারদলীয় নেতারা জড়িত রয়েছে। তাদের সঙ্গে সিংগাইরের অনেক নেতাকর্মীর যোগসাজশ রয়েছে।
মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত সেলিম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার বলেন, এখানে বিএনপির লোকজনই মাটি কাটছে।
স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার সমুন বলেন, এভাবে মাটি কাটার ফলে ফসলি জমি ভাঙতে শুরু করেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরো বেড়ে যাবে। আমি চেয়ারম্যানসহ অনেককে জানিয়েও কোনো ফল পায়নি।
চান্দহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হোসেন বাদল বলেন, প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে জমির মালিকরা ভয়ে তাদের জমির মাটি সেলিমসহ অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ অনুমতি নিয়ে ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করছে। এতেও আমার কিছু করার নেই।
সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটলে আমাদের কিছু করার নেই। আর সরকারি নদী থেকে কাটা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।