দোহার-নবাবগঞ্জে হাত বাড়ালেই মাদক

304

ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলায় মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখানে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। প্রতি ১ কি.মি. রাস্তায় ২-৩টি করে মাদকের স্পট রয়েছে। মাদকাসক্তের কারণে এলাকার আইনশৃংখলা, পারিবারিক কলহ, খুনের ঘটনা বেড়ে চলছে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন সচেতন মহল।

নবাবগঞ্জের বাসিন্দা চলচ্চিত্র অভিনেতা জামিলুর রহমান ওরফে শাখা বলেন, এক সময় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন তা সবার হাতের নাগালে। এ কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত যুবকদের মধ্যেও মাদকের বিস্তার ঘটছে। দোহার-নবাবগঞ্জে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলামদসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ। মাদকের ছোবল থেকে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ কেউ বাদ যাচ্ছে না।

দোহার-নবাবগঞ্জ মাদকে ছড়াছড়ি হলেও প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশের তিনটি গ্রামের প্রায় শতাধিক যুবক ও ছাত্র মাদকাসক্ত হয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এর মধ্যে ১০-১৫ জন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় ঘুরছে।

মাদক বিস্তারের কারণ: দোহার-নবাবগঞ্জের পুরুষ অধিবাসীদের শতকরা প্রায় ৮০ জন প্রবাসী। ছেলে-মেয়েদের উঠতি বয়সে বাবার শাসন থেকে তারা মুক্ত। ছেলে-মেয়েরা তাদের সহজ-সরল মাকে স্কুল-কলেজের বেতন কিংবা পোশাক-প্রসাধনী কেনার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নেশাখোর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠে। ফলে নিজের অজান্তেই মাদকের বিষাক্ত থাবায় নিজেকে সঁপে দেয়।

অন্য খবর  দোহারের মুকসুদপুরে ইটভাটাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

সরেজমিন জানা গেছে, দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলায় মাদকের প্রধান স্পট প্রায় ৬০টি। ভাসমান স্পটের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। এসব জায়গায় হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, বাংলা মদ পাওয়া যায়। মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও রিকশায় চলন্ত অবস্থায়ও মাদকের বেচাকেনা হয়ে থাকে। এসব মাদক ব্যবসায় জড়িত আছেন রাজনৈতিক অনেক কর্মী। যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠছে মাদকের আখড়া

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দুরা এলাকার এক শিক্ষক জানান, মাদকের ভয়াবহতায় ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠাতেও ভয় হচ্ছে।

দোহার উপজেলা: মুকসেদপুর ট্রলারঘাট, নারিশা ট্রলারঘাট, মৈনট ট্রলারঘাট, বাহ্রা ট্রলারঘাট দিয়ে দোহারে মাদকের প্রবেশ ঘটে বলে স্থানীয়রা জানায়।

সূত্র জানায়, ভারতীয় সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে যেসব মাদক রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করে এসব ট্রলারঘাট তারই নিরাপদ রুট।

মেঘুলা, জয়পাড়া বাজার ভূতের গলি, উপজেলা সদর, বাহ্রা ঘাট, মৈনট আবাসন প্রকল্প, দক্ষিণ শিমুলিয়া, অরঙ্গবাদসহ বিভিন্ন স্থানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করে থাকে। রাইপাড়ার মনা, সাগর, জয়পাড়ায় হকুম আলী, বাবুল, সুতারপাড়ার রাকিব, রোমান এবং বাহ্রাঘাটে উজ্জ্বল শিকদার ও শিমুলিয়ায় লিটন এ ব্যবসা পরিচালনা করে বলে এলাকাবসীর অভিযোগ।

অন্য খবর  বান্দুরা বাসস্ট্যান্ডের সরকারি ইজারাভুক্ত জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ

নবাবগঞ্জ উপজেলা: উপজেলায় শোল্লা ইউনিয়নের সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এখানকার রুপার চর গ্রামকে মাদকের শহর বলা হয়ে থাকে। কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ এলাকা, পুরাতন বান্দুরা, নতুন বান্দুরা, গালিমপুর, চুড়াইন, আগলা, কৈলাইল, বলমন্তচর, আলগীরচর, আজিজপুর মাদকের কেনা-বেচা অন্যতম স্পট। এসব এলাকা মাদকের হাট নামেও পরিচিতি রয়েছে বলে জানা যায়। চুড়াইন এলাকার শামীম, বাবু, ছাতিয়ার আমান, বান্দুরার মফিজ, আবু, মনির কসাই, কুঠুরির তুহিন মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে।

এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান বলেন, মাদকের সঙ্গে কোনো আপস নেই।

আপনার মতামত দিন