৩য় পর্বঃ কেন দ্রুত বিয়ে করবেন

165

(লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন সাদ, দোহারের কৃতি সন্তান, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।)

বিয়ের ফজিলত ও উপকারিতাঃ সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ আর পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন মরুবালুর চর। হতাশার অতল সাগরে হাবুডুবু খায় নর ছাড়া নারী আর নারী ছাড়া নর। এ কারণেই তো পৃথিবীর প্রথম মানব সাইয়ীদুনা আদম আলাইহিস সালাম চরম ঔদাসীন্য ও অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন অনিন্দ অতুলনীয় সুখের জান্নাতে থেকেও। সেই চরম অতৃপ্তি ও ঔদাসীন্য দূর করার লক্ষ্যে তাঁর জীবন সঙ্গিনীরূপে সৃষ্টি করলেন মা হাওয়া (আঃ)-কে। আবদ্ধ করলেন বিয়ের বন্ধনে। অতৃপ্ত আদম তৃপ্ত হলেন। দূর হলো সকল ঔদাসীন্যতা। শুরু হলো নর-নারীর বৈধ যুগল বাঁধনে তথা বিয়ের সূত্রে মানবজীবন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- “হে মানবগোষ্ঠী! তোমরা ভয় কর তোমাদের সেই রবকে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে আর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রীকে এবং তাদের দুজন থেকে সৃষ্টি করেছেন অগনন নর-নারী।” (নিসা:১) বিয়ে মূলত একজন সুস্থ মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন। উপরন্তু মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও পবিত্রতার অন্যতম উপায় বিয়ে। ফিতরাতের ধর্ম ইসলামও এর গুরুত্ব দিয়েছে।
বাংলা বিয়ে শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো নিকাহ যার আভিধানিক অর্থ বন্ধন, সংযুক্ত করা। ইসলামী পরিভাষায় ইচ্ছাকৃতভাবে একজন পুরুষের একজন নারীর বন্ধনকে বিয়ে বলে। (রদ্দুল মহতার: ৪/৫৭-৬০; কিতাবুল ফিকাহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ: ৪/১) বিয়ে সম্পাদিত হতে হবে দুইজন স্বাধীন বিবেকবান প্রাপ্তবয়স্ক ও মুসলমান পুরুষ অথবা এ সকল গুণে গুণান্বিত একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর উপস্থিতিতে বর কিংবা কনে পক্ষের ইজাব তথা প্রস্তাব আর অপর পক্ষের কবুলের মাধ্যমে। এই প্রস্তাব ও কবুল সাক্ষীগণের শ্রবণও করতে হবে। এর বিপরীতে কোন পদ্ধতিতে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা বিশুদ্ধ হবে না। (হিদায়া:২/২৮৫; রদ্দুল মুহতার:৪/৬৯, ৮৬-৯২)
বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত : অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা যেভাবে মানব জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন, শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে- একজন মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিয়ের অপরিহার্যতা তেমনই। তাই ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফজিলত ও মর্যাদা তুলনাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- “তোমাদের মধ্যে যে পুরুষের স্ত্রী নেই আর যে নারীর স্বামী নেই তাদের এবং তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তাহলে আল্লাহ (বিয়ের বরকতে) নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ বড় প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর:৩২) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- “আপনার পূর্বে প্রেরণ করেছি অনেক রাসূল এবং তাদের দিয়েছে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।” (সূরা রাদ:৩৮) সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার যৌনতাকে দমন করে ।” (বুখারী:২/৭৫৮, মুসলিম:১/৪৪৯, ইবনে মাজা:১৩২) সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি পূত-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন, বিয়ে করে স্বাধীন নারীকে। ইবনে মাজাহ:১৩৫ অন্য এক বর্ণনায় আনাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন- কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।” মিশকাত:২/২৬৮। সাহাবী আবু আইয়ুব (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে মহানবী (সা.) বলেছেন- “নবী-রসূলগণের চারটি সুন্নত রয়েছে। সেগুলো হলো ১. লজ্জাবোধ, ২. সুগন্ধি ব্যবহার, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. বিয়ে করা।” (তিরমিযী:১/১২৮) রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন- তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন-১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, ২. চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, ৩. আল্লাহর পথে জিহাদকারী। (তিরমিযী:২/২৯৫;৪; নাসায়ী:২/৫৮; ইবনে মাজা;১৮১) সুবহানাল্লাহ! কি অসাধারণ ফজিলত! মানুষ মানবিক প্রাকৃতিক চাহিদার কারণেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অথচ আমাদের প্রাণের স্পন্দন ইসলাম বলেছে বিয়ে আর্থিক সচ্ছলতার কার্যকর উপায়। কখনো বলেছে, পবিত্রতার কার্যকর মাধ্যম। আবার কখনও বলেছে দ্বীনের অর্ধেক। কখনও বা আখ্যায়িত করেছে আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম হিসাবে। সম্ভবত এত ফজিলত ও মর্যাদার কথা অন্য কোন ইবাদত সম্পর্কে বলা হয়নি। কারণও আছে। কেননা সকল ইবাদত বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ রূপে আদায়ের জন্য প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক শুদ্ধতা, পবিত্রতা এবং স্থিতিশীলতা। যার অনেকটাই নির্ভর করে ইসলাম অনুযায়ী বিয়ের উপর।
আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম দয়ায় তাঁর প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর খাতিরে আমাদের সকলকে ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন। আমীন

আপনার মতামত দিন