সুপ্রিম কোর্টে সমনে আদালতে হাজির ইমরান খান

127
ইমরান খান

আর্মি পাবলিক স্কুলে (এপিএস) হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সমন পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ বুধবার তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সমনে। এই সমন পেয়ে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হয়েছেন ইমরান খান। সেখানে ইমরান খানের কাছে আদালত কি জানতে চান, কি নির্দেশনা দেন- তা জানতে উদগ্রীব সবাই। এই সুপ্রিম কোর্টই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। ফলে কি ঘটতে যাচ্ছে আজকের এই শুনানিতে, তা জানার আগ্রহ সবার মাঝে।

আর্মি পাবলিক স্কুলে (এপিএস) হামলার ঘটনায় অনেক শিশুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশুদের পিতামাতার কাছে শোক প্রকাশ করে সরকার। এর বাইরে আর কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা আদালতকে জানাতে আগের শুনানিতে এটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।

পেশোয়ারে এপিএস-ওয়ারসাক স্কুলে জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ১৪৭ জন নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে শিশু ছিল ১৩২টি। আজ বুধবারের শুনানিতে এটর্নি জেনারেল খালিদ জাবেদ খানের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, আদালত এর আগে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কি তা পড়েছেন? জবাবে এটর্নি জেনারেল জানান, ওই নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়নি। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জানাবেন।

অন্য খবর  জুলু রাজা মিসুজুলু হাসপাতালে, বিষ প্রয়োগের সন্দেহ

এটর্নি জেনারেলের এমন জবাবে ক্ষিপ্ত হন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ। তিনি বলেন, এটাই কি সিরিয়াসনেসের ধরন? প্রধানমন্ত্রীকে ডাকুন। তার সঙ্গে আমরাই কথা বলবো। এই অবস্থা চলতে পারে না। প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যে দায় নিজের কাঁধে তুলে নেন এটর্নি জেনারেল খালিদ। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে সব ভুলের দায় আমরা নিচ্ছি।

হামলার সময় স্কুলটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে যেসব সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে যে এফআইআর করা হয়েছিল- আগের শুনানিতে তার বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন নিহত শিশুদের অভিভাবকরা। এ বিষয়ে আজ বুধবারের শুনানিতে এটর্নি জেনারেল খালিদ বলেছেন, উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর নিবন্ধিত করা যায় না।

প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, যখন নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা, তখন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোথায় নিখোঁজ? সাবেক সেনাপ্রধান এবং দায়ী অন্যদের বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা নিবন্ধিত হয়েছিল?
প্রধান বিচারপতির এমন প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, তদন্ত রিপোর্টে সাবেক সেনাপ্রধান বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক মহাপরিচালকের সম্পর্ক থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্য খ-ন করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, দেশে বিপুল এক গোয়েন্দা সিস্টেম সচল আছে। এর পিছনে শত শত কোটি রুপি খরচ হচ্ছে। দাবি করা হয় যে, আমাদের গোয়েন্দা এজেন্সি বিশ্বের সেরা। তাদের পিছনে এত অর্থ খরচ করা হচ্ছে। অথচ ফল শূন্য!

অন্য খবর  দেশে প্রথম বিশ্বের দামি মরিচের চাষ, প্রতিকেজির দাম ২৮ লাখ টাকা!

বেঞ্চের আরেক বিচারপতি ইজাজুল আহসান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর জানা উচিত যে, উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে অপারেশন চালানো হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে স্পর্শকাতর টার্গেট হলো শিশুরা।

বিচারপতি কাজি মোহাম্মদ আমিন আহমেদ তার পর্যবেক্ষণে বলেন, কিছু গ্রুপের সঙ্গে সরকার সমঝোতা করছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তিনি তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর প্রসঙ্গে টেনে এ কথা বলেন। এরপর প্রশ্ন রাখেন, সত্যিকার অপরাধীদের পিছু নিয়ে তাদেরকে ধরা কি রাষ্ট্রের কাজ নয়? অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ আরো বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের মরতে দিতে পারে না আদালত। স্কুলের প্রহরী এবং সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তাতে যদি শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করতে হয়, তবুও বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারণ, উচ্চ পদে যারা থাকেন তারাও বেতনভাতা নেন, সুবিধা নেন। তারপর দায়িত্ব থেকে সরে যান। বিচারপতি আহসান আরো বলেন, ভিতর থেকে সমর্থন ছাড়া সন্ত্রাসীদের পক্ষে স্কুলে ওই হামলা করা সম্ভব ছিল না। একে তিনি নিরাপত্তা ব্যর্থতায় হামলা বলে উল্লেখ করেন।

আপনার মতামত দিন