সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আন্দোলন দমনের নীল নকশা তৈরি হত: জাতিসংঘ প্রতিবেদন

57
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আন্দোলন দমনের নীল নকশা তৈরি হত: জাতিসংঘ প্রতিবেদন

ডেস্ক রিপোর্টারঃ ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রতি সন্ধ্যায় ‘কোর কমিটি’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থাকতেন এবং আন্দোলন দমনের নীল নকশা প্রণয়ন করতেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনের কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো ওই বৈঠকে নেওয়া হতো। এতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপির সাবেক মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা। আন্দোলনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাতে সামরিক বাহিনীর একজন সিনিয়র জেনারেলও ২০ জুলাই থেকে বৈঠকে যোগ দেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন যে, ভারী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরতে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু তার সেই কৌশল ব্যর্থ হয়। বরং ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়।

ছাত্রলীগের হামলার উসকানি

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ সমর্থকদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। তবে আন্দোলনকারীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

অন্য খবর  ঢাকা-১৭ আসনে একটি তামাশার নির্বাচন হয়েছে: ফখরুল

একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার ভেবেছিল শক্তি প্রদর্শন করলে সাধারণ আন্দোলনকারীরা পিছু হটবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ক্রমশ আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হয়ে ওঠে এবং সরকারি বাহিনীর দমনপীড়ন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

প্রাণঘাতী দমননীতি ইন্টারনেট বন্ধ

ওএইচসিএইচআর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই থেকে সাধারণ জনগণও আন্দোলনে যোগ দেয়। এই পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনী রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত করা হয়।

সরকার ২৩ জুলাই পর্যন্ত সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বন্ধ রাখে, যাতে আন্দোলনের তথ্য প্রচার না হতে পারে। তবে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েও সরকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মতে, এসব পদক্ষেপ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তারা বাংলাদেশে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

আপনার মতামত দিন