মৈনটে চলছে মাটি কাটা, বর্ষায় মাহমুদপুর বিলীনের আশংকা

267

ঢাকার দোহারের মাহমুদপুর ইউনিয়নের মৈনটঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর চর থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন মুন্সী, ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর পদ্মার চর থেকে বালি উত্তোলন বন্ধে আবেদন করা হলেও কিছু হয়নি।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নির্দেশে  ও  প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ বার মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও বর্তমানে তা চলছে অবাধে। পরবর্তীতে আর কোন প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ এএসপি শামীমের পিতা এবং জজ কামালের ভাই এই অসাধু চক্রকে আশ্রয় দিচ্ছে। এদিকে এলাকার তরুণেরা এর প্রতিবাদ করায় প্রভাবশালী মহলের কারণে এরা বাড়ীতে থাকতে পারছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালি উত্তোলনের সুবিধার্থে মেশিন এবং ড্রেজার ব্যবহার করা হয়।

প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ১০০ ট্রাক বালি দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। বালি স্তূপ করে রেখেও চড়া দামে বিক্রি হয়। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের ভয়ে কেউই এ কাজে বাধা দিতে সাহস পায় না। স্থানীয়রা জানান, মাহমুদপুর ইউনিয়নের চর হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুসুমহাটি ইউনিয়নের কার্তিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চরকুশাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দরীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, জামালচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়পাড়া ইউনিয়নে লটাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আজাহার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে দিনভর বালিভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয় দোকানপাটসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে মানুষ ও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অবাধে বালি পরিবহনের কারণে পুরো এলাকা হয়ে পড়েছে বালিময়।মৈনটঘাট এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর পদ্মা পাড়ের জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। দোহারের মানচিত্রে নয়াবাড়ী, মাহমুদপুর ও নারিশা ইউনিয়নের আয়তন পদ্মার ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে। এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কথা কেউ শোনে না। আমরা ভাত খেতে পারি না, ভাতে বালি পাই। ঘুমাতে পারি না, সারা রাত ট্রাক চলে।’নদীর পাড় থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখানে তা উপেক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসন জেনেও না জানার ভান করছে বলে এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করে। স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বলেন,  টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে। টাকার কাছে সবাই হেরে যায়। শামীম আহমেদ মোল্লা নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, এর সঙ্গে জড়িত কার্তিকপুর গ্রামের বাহের খান, আজাহার, লাল মিয়া, শেখ হোসেন, তোফাজ্জল শিকদার, চর পুরুলিয়ার আফজাল শিকদার, মাহমুদপুরের সুজন পেশকার, সোরহাবসহ একটি প্রভাবশালী মহল। প্রশাসনের লোকজন বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য আসেন, তার পর টাকা নিয়ে চলে যান। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে ফিটনেসবিহীন ১০টি ট্রাকসহ পাঁচজনকে আটক করে প্রশাসন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো সাজা না দিয়ে পুলিশ ট্রাক ও আটকদের ছেড়ে দিলে বালি ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক জানান, কেউ থানায় এসে অভিযোগ করলে বালি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল কবির ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি আমি দেখব।একই বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হুদা বলেন, পদ্মার তীর থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে, প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নেয়া হবে। 

আপনার মতামত দিন