মান্নান খানের সাড়ে ৯ কোটি টাকার উৎস সন্দেহজনক

325

সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ও তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার সাড়ে ৯ কোটি টাকার সম্পদের ‘সন্দেহজনক উৎস’ বেরিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তাদের অর্থের বৈধ উৎস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন দেড় মাস অনুসন্ধান শেষে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আবদুল মান্নান খান ও তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, প্রাপ্ত সম্পদ শুধু নবম ও দশম জাতীয় সংসদের হলফনামায় মান্নান খানের স্বেচ্ছায় উল্লেখিত সম্পদ বিবরণী থেকে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের পরবর্তী অনুসন্ধানে আরও সম্পদ বেরিয়ে আসতে পারে।
সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদের হলফনামায় উল্লেখিত অস্বাভাবিক সম্পদ বিবরণীর সূত্র ধরে ২২ জানুয়ারি দুদক সরকারদলীয় যে ৭ ভিআইপির সম্পদের ওপর অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, আবদুল মান্নান খান তাদের একজন। দশম জাতীয় সংসদের হলফনামা অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরে অর্থ-সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয় ৪ কোটি টাকার বেশি। অথচ নবম সংসদের হলফনামায় নিজের সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেন। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। দশম সংসদের হলফনামায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ লাখ ২২৭ টাকার উৎস দেখিয়েছেন মৎস্য চাষ। তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানা গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও উল্লেখ করেছেন ‘ব্যবসায়ী’ হিসেবে।
মৎস্য খাত থেকে স্ত্রীর আয় দেখিয়েছেন ৮৫ লাখ টাকা। দুদক অনুসন্ধানে মান্নান খান কিংবা তার স্ত্রীর নামে কোথাও কোনো মৎস্য খামারের অস্তিত্ব পায়নি। তবে ২৭ ফেব্র“য়ারি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মান্নান তার দোহার-নবাবগঞ্জ সংলগ্ন আড়িয়াল বিলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ করেছেন বলে জানান।
হলফনামায় মান্নান রাজধানীর গুলশান, খিলগাঁওয়ে কিছু স্থাবর সম্পত্তি থাকার কথা উল্লেখ করলেও ১১৭ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউর ইউনিক হাইটসে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শন করেননি। দলিল মূল্য ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮৬ টাকা দাবি করলেও একেকটি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্যই ২ কোটি টাকা হবে মর্মে বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানে। গুলশান থানাধীন ভাটারা মৌজায় কেনা ৮ শতাংশের প্লটের প্রকৃত মূল্য গোপন করেন তিনি। প্লটটির দলিল মূল্য ২৩ লাখ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত মূল্য হবে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। ২০১১ সালে রাজধানীর খিলগাঁও গজারিয়া মৌজায় ১৫ শতাংশ কিনে মান্নান দলিল মূল্য দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে এর মূল্য বেরিয়ে আসে দেড় কোটি টাকা।
গুলশানের বড় বেরাইদ মৌজায় ৬০ শতাংশ জমি থেকে ২৯ শতাংশ জমির এওয়াজ বদল করলেও অবশিষ্ট ৩১ শতাংশ নিজের মালিকানায় থেকে যাওয়ার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেননি। বাজার দর অনুযায়ী যার মূল্য বেরিয়ে এসেছে আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা। ২০১২ সালে মান্নান খান ব্যাংক ঋণ শোধ করেছেন পৌনে ১২ লাখ টাকা। যা তার বৈধ আয় থেকে শোধ করা সম্ভব নয় মর্মে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
হলফনামায় নিজেকে ‘আইনজীবী’ হিসেবে উল্লেখ করলেও তিনি ডাকসাইটে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। এফডিআর দেখিয়েছেন ৩৭ লাখ টাকা। আগে রিকশা কিংবা হেঁটে চললেও প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৫৮০২) কেনেন ৪৪ লাখ ৩১ হাজার টাকায়। এ টাকার উৎস সম্পর্কেও সন্দেহ পোষণ করা হয় প্রতিবেদনে।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তুষ্ট হয়ে কমিশন অনুমোদন দিলে মান্নান খান ও তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার সম্পদ বিবরণী চাওয়া হবে।

আপনার মতামত দিন