ঈদ সামনে রেখে নবাবগঞ্জে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তৎপর

518

আসিফ শেখ♦ বাংলাদেশের অন্যতম রেমিট্যান্স অর্জনকারী ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের দুই উপজেলা। এই এলাকার বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী প্রবাসী। আর ঈদ সামনে রেখে নবাবগঞ্জে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈধ পথে এসব টাকা না পাঠিয়ে প্রবাসী প্রতিনিয়ত টাকা পাঠাচ্ছে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর প্রশাসনের চোখের আড়ালে ব্যাপকহারে চলছে জমজমাট হুন্ডি ব্যবসা। হুন্ডি ব্যবসা এ অঞ্চলের একটি অত্যন্ত পুরনো অবৈধ ব্যবসা। এ ব্যবসা যদিও অবৈধ কিন্তু নবাবগঞ্জে অবাধে চলছে যুগ-যুগ ধরে।

নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের প্রবাসী শ্রমজীবি মানুষ সৌদিআরব, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চাকুরীসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে প্রবাস জীবনযাপন অতিবাহিত করছে। এসব প্রবাসী সাংসারিক খরচসহ নানা প্রয়োজনে দেশে টাকা পাঠান। নিয়মানুসারে প্রাবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশে পাঠানোর কথা। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে সেখানে দেশে টাকা পাঠাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ড্রাফট বানাতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। ফলে নানামুখী বিড়ম্বনা ও হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রবাসীরা হুন্ডিকে অর্থ প্রেরণের সহজ মাধ্যম হিসাবে বেছে নেয়।

হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে নবাবগঞ্জে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হলেও সরকারের কোষাগারে এক কানাকড়িও রাজস্ব জমা পড়ছেনা। এ ধরণের হুন্ডি ব্যবসা চলতে থাকলে সরকার হারাবে বিপুল পরিমান রাজস্ব আর প্রতারিত হবে প্রবাসী পরিবারের লোকজন। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এ এলাকাকে হুন্ডির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে। হুন্ডি ব্যবসার সাথে যারা জড়িত:  কুয়েত ও সৌদি আরব থেকে হুন্ডি ব্যবসা করে নবাবগঞ্জের এমন ৯ জনের নাম বিশেষ সূত্র প্রকাশ জানিয়েছে ফোন ও ফেজবুকের মাধ্যমে। যেসব সূত্র থেকে যানা গেছে তারাই প্রতিমাসে এসব হুন্ডি কারবারিদের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠায়। যারা যানিয়েছে তারা কেউ নিজেদের নাম প্রকাশে অগ্রহী নয়।

অন্য খবর  জয়কৃষ্ণপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা নিহত

যাদের নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে তারা হলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের বকচর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মোবারক খাঁ ও তার ভাই হানিফ খাঁ, নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিলপল্লি গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মো. সামাদ, শিকারীপাড়া ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আল-আমীন, শিকারীপাড়া ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মো. রফিজ। গালিমপুর ইউনিয়নের সোনাহাজরা গ্রামের সৌদি প্রবাসী আতাহার, গালিমপুর ইউনিয়নের সোনাহাজরা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সোলাইমান, চুড়াইন ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সেলিম, বক্সনগর ইউনিয়নের চক বক্সনগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী জবরুল। দেশে থেকে যারা টাকা বিলি করেন তারা হলেন, কুয়েত প্রবাসী মোবারক খাঁ ও তার ভাই হানিফ খাঁর টাকা বিলি করেন তার পিতা মিলন খাঁ, কুয়েত প্রবাসী সামাদের টাকা বিলি করেন তার স্ত্রী, কুয়েত প্রবাসী আল-আমীনের টাকা বিলি করন তার ভাই রোমান, কুয়েত প্রবাসী রফিজের টাকা বিলি করেন তার স্ত্রী তাছলিমা। সৌদি প্রবাসী আতাহারের টাকা বিলি করেন তার স্ত্রী নুরনাহার, সৌদি প্রবাসী সোলাইমানের টাকা বিলি করেন তার ভাই সুজন, সৌদি প্রবাসী সেলিমের টাকা বিলি করেন তার ভাই রানা, সৌদি প্রবাসী জবরুলের টাকা বিলি করেন তার ভাই আব্দুল খালেক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিকারীপাড়া ইউনিয়নের মনিকান্দা গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রী জানান, ব্যাংকে টাকা পাঠালে তা উত্তোলন করতে বান্দুরা যেতে হয়। আর হুন্ডির মাধ্যমে টাকা দিলে ঘরে বসে সহজেই পাওয়া যায়। 

চর খলসি গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, আগে ছেলে ব্যাংকে টাকা দিতো আমি বুড়া মানুষ ব্যাংকে টাকা আনতে গেলে অনেক কষ্ট হয় এখন আমার ছেলে টাকা কার কাছে জানি দেয় সে প্রতিমাসে টাকা বাড়িতে দিয়ে যায়। 

অন্য খবর  দোহার পৌরসভার ভোট স্থগিত

এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতার কথাও মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত রয়েছে। রয়েছে দায়িত্বশীল প্রশাসনের সঙ্গে বোঝাপরা। দায়িত্বশীল প্রত্যেকের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্র দেদারসে ব্যবসা করছে বলেও খবর প্রচারিত আছে। গুটি কয়েক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের হাতে বর্তমানে নবাবগঞ্জের পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ জনগণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে আমদানী ও রপ্তানী ব্যয়ে যে ঘাটতি থাকে তার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে প্রবাসী আয়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতি বছরই রপ্তানীর থেকে আমদানি বেশি হয়। সেই ঘাটতির অর্থায়নে যায় প্রবাসীদের অর্থ।

হুন্ডিবাজ মহারাজরা ঘুণেধরা পোকার মতো ভিতর হতে খেতে খেতে অর্থনীতির সর্বনাশ করছে। যারা এ অপরাধের সাথে জড়িত তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে বহু আগেই সাঁড়াশি অভিযান চালানো বাঞ্ছনীয় ছিল। এরাই প্রবাসীদেরকে প্রভাবিত করে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের সাথেও এলাকার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

তাই হুন্ডি ব্যবাসায়ীরা খুব সহজেই আইনের ফাঁক থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। 

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সায়েদুর রহমান নিউজ৩৯কে বলেন, হুন্ডি ব্যবসার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আপনার মতামত দিন