আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান শিল্পপতি সালমান এফ রহমান ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। বিএনপির প্রার্থী হতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও খন্দকার আবু আশফাকও কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বর্তমান এমপি জাপার অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের দলীয় মনোনয়ন পাওয়াটা নিশ্চিত। এ অবস্থায় প্রধান দু’দলই চাচ্ছে তাকে পরাজিত করে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সভা সমাবেশেও। ভোটারদের আলোচনায়ও নিবাচন ইস্যু। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আলাপ-আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে আগামী নির্বাচন ও কে হবেন কোন দল থেকে প্রার্থী।
ঢাকা জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দোহার ও নবাবগঞ্জ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ সংসদীয় আসন। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটি। এবার বড় দুই দলই চায় আসনটি ফিরে পেতে। আর জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য চান ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আবারও ক্ষমতায় আসতে। এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবাই হেভিওয়েট। একক প্রার্থী থাকায় স্বস্তিতে রয়েছে জাতীয় পার্টির সমর্থকরা। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কারা মনোনীত হবেন তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে।
ঢাকা-১ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানকে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হন। জাপা থেকে সালমা ইসলাম এবারও মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন দলীয় কর্মীরা। এ আসনে জাপার আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এবারও তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। তাই এখন থেকেই তিনি প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। এ অবস্থায় এটা মোটামুটি পরিষ্কার যে এ আসনে জাপা শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে নৌকার প্রতীক পেতে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পপতি সালমান এফ রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে পরাজিত হন। ওই সময় দোহার ও নবাবগঞ্জ পৃথক আসনে নির্বাচন হয়েছে। সীমানা পুনর্বিন্যাসে ২০০৮ সালের পর থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় একটি আসন।
দুই উপজেলার নেতাকর্মীদের মাঝে মাঠে গুঞ্জন রয়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামী লীগ যদি সালমান এফ রহমানকে এবার মনোনয়ন দেয় তাহলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
সমপ্রতি দোহারে এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী নির্বাচনে সালমান এফ রহমানের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। একই সভায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও ঘোষণা দেন দোহার-নবাবগঞ্জ আসনে আগামী নির্বাচনে তার চাচা সালমান এফ রহমানকে সমর্থন দেবেন। বিএনপি থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নাজমুল হুদা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। এবার তিনি ঢাকা-১৭ আসন ( গুলশান) থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে পরাজিত করে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের একজন শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনিও এলাকায় কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগসহ ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে দলের মধ্যে তার অবস্থানও অনেক শক্ত। তাকেও দলের হেভিওয়েট প্রার্থী মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ, কর্মীসভা করে চলেছেন। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন আরেক তরুণ প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট নূরে আলম উজ্জল। তিনিও তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপিও চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। এ লক্ষ্যে এ আসনে যোগ্য প্রার্থী চাচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে বিএনপির দুইজন প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। আসনটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চার চারবারের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এলাকায় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাকে দল থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ আসনে তাকে বিএনপির একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনগণ।
মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। দলের সভা সমাবেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদলসহ নবীন-প্রবীণ ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি ঢাকা জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা ফজলুল হক হলের সাবেক ভিপি। নিয়মিত নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে যাওয়ায় তাকে জনবান্ধব নেতা হিসেবে দেখছেন দলের স্থানীয় সমর্থকরা। তাই এবার আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা তরুণ হিসাবে তাকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চারজন প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, সালমান এফ রহমানের বাড়ি দোহার উপজেলায়। পনিরুজ্জামান তরুণের বাড়ি নবাবগঞ্জে। অন্যদিকে বিএনপির ও জাপার প্রার্থীর বাড়িও নবাবগঞ্জ উপজেলায়। ভোটের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার প্রবণতাও রয়েছে এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।