দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত

360

২৫ আগষ্ট নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুরে ইছামতি নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রতিবছর বাংলা ভাদ্র মাসে ৮ তারিকে গণনা করে দাউদপুরের ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়।

গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে নৌকাবাইচ উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। যুগযুগ ধরে প্রচলিত নৌকাবাইচ উৎসব সব বয়সের মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও এখনো নৌকা বাইচ রয়ে গেছে, যদিও আগের সেই জৌলুস আর নেই। গ্রামের মানুষের পাশাপাশি শহরে মানুষের কাছেও নৌকা বাইচ আকর্ষণীয়।

প্রায় সত্তর বছর আগে নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামের একটি হিন্দু জমিদার পরিবার প্রথম ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর এ নদীতে নৌকা বাইচের দেখো দেখি অন্যান্য এলাকায় আস্তে আস্তে নৌকা বাইচ প্রতিয়োগিতা চালু হয়।

ঢাকা দক্ষিণে সবচেয়ে বড় নৌকা বাইচ এটি। এই বাইচ দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসে। সারাবছর দাউদপুরে মানুষের আনাগোনা কম থাকলেও নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে লোকে লোকারন্য হয়।

নৌকা বাইচ দেখতে আসা উৎসুক হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে এ গ্রামটিতে। দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত দাউদপুরের ইছামতি নদীতে রঙ বেরঙের শত শত নৌকার উপস্থিতি চোখে পড়ে।

দর্শকদের আনন্দ দিতে বাইচের নৌকার বর্নিল সাজে সাজানো হয় ছোট ছোট অনেক নৌকা। ওইসব নৌকায় এ অঞ্চলের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় নানা ভাবে।

এ বছর দাউদপুরের নৌকা বাইচে অংশগ্রহন করতে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলা থেকে বড় বড় বাইচের নৌকা আসে।

অন্য খবর  চুড়াইনে মাদকসেবীর কারাদণ্ড

সোনার তরী, মাসুদ রানা, খান বাড়ি, সোনার চাঁন, আল্লাহর দান এন্টার প্রাইজ, হাজারী তরী, রিয়াদ এন্টার প্রাইজ, পরণ তরী, মোল্লা, রাজ, ফকির বাড়ি, বাংলা গৌরব, গয়োন, তরী, জিন্দশাহ ভক্ত প্রভৃতি নামে বাহারি নৌকা আসে ইছামতি নদীতে। প্রত্যেকটি নৌকা দুইবার করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়। এর মধ্যে থেকেই ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান নির্ধারন করে নৌকা বাইচ কমিটি বিজয়ী নৌকার মালিকদের হাতে কমিটির পক্ষ থেকে পুরষ্কার দেওয়া হয়।

নৌকা বাইচ কমিটি বাইচের সকল আয়োজন করে থাকে। দাউদপুর নৌকা বাইচ কমিটির সভাপতি কাওছার আহমেদ আক্কু জানান, দাউদপুরের নৌকা বাইচ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এ এলাকার মানুষের মধ্যে সম্পীতি ও এক্য গড়ে উঠেছে।

তিনি জানান, বাইচ উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনরা বেড়াতে আসে প্রতি বছর। এটা একটি রীতিতে পরিনত হয়েছে। বাইচ উপলক্ষে ইছামতি পাড়ে বসে গ্রাম্য মেলা। নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী লোকজনের যেন ঢল নামে দাউদপুরের নৌকা বাইচে। ইছামতিপাড়ে আনন্দ উৎসবে পরিনত হয়।

জাতি-ধর্ম, বর্ষ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে পদ্মাপাড়ের ৩/৪ কিলোমিটার এলাকা জুরে। সেখানে শুধু নৌকার সারি। দর্শনাথীরা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও স্পীড বোট নিয়ে উপভোগ করে নৌকাবাইচ। অনেকে এরমধ্য থেকে পুষিয়ে নেন নৌ-ভ্রমণের নির্মল আনন্দ।

দর্শনাথীরা নৌকায় আয়োজন করে খাবারদাবারের। দোহার-নবাবগঞ্জ এবং দেশের অন্য অন্য জায়গা থেকে আসা প্রায় ১ লক্ষ মানুষ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। বিকাল ৩টায় বাইচ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১টা থেকে বাইচের এলাকা মুখরিত হয়ে যায় উৎসাহী জনতার আগমনে।

অন্য খবর  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে দোহার- নবাবগঞ্জ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, জবি শুভেচ্ছা বিনিময়

বাইচে আগত দর্শনাথীরা ঢোল, তবলা নিয়ে নেচে-গেয়ে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করে এলাকাজুরে। দাউদপুর বাজার কমিটি ও শিকারীপাড়া ইউনিয়নের উদ্দগে ইছামতি নদীতে ২৫ই আগষ্ট অনুষ্ঠিত হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ২০১৩।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ঘাষি ও চৈরা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। এদের মধ্য ৬টি ঘাষি নৌকা এবং ৭টি চৈরা নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। ৬টি ঘাষি নৌকার মধ্য চ্যাম্পিয়ন হয় মাসুদ রানা-১, রার্নাস-আপ হয় খান বাড়ি, চ্যাম্পিয়ন নৌকাকে ফ্রিজ ও রার্নাস-আপ নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন প্রদান করা হয়। বাকি ৪টি নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন এবং ৭টি চৈরা নৌকার মধ্য চ্যাম্পিয়ন হয় শুকচাঁন তরী ও রিয়াদ এন্টার প্রাইজ ২টি নৌকাকে ফ্রিজ ও রার্নাস-আপ ৫টি নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন প্রদান করা হয়।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বদির মিয়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোজাম্মেল হক টিপু বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী, আলীমুর রহমান খান পিয়ারা চেয়ারম্যান শিকারীপাড়া ইউনিয়ন, আব্দুল্লাহ আল মামুন খান চেয়ারম্যান বারুয়াখালী ইউনিয়ন, পলাশ চৌধুরী চেয়ারম্যান নয়নশ্রী ইউনিয়ন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাইচ চেয়ারম্যান হান্নান, শেখ আব্দুস সালাম, নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আঃ মান্নান, মোসফিকুর রহমান, সন্তোষ প্রমুখ।

আপনার মতামত দিন