স্মৃতির আড়ালে নবাবগঞ্জের সন্তান অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক

1986

কেউ তাকে বলেন বাংলার সক্রেটিস, কেউবা বলেন চলমান বিশ্বকোষ। তিনি হলেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক । তিনি শিক্ষকের শিক্ষক, দার্শনিকদের দার্শনিক। অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম সব বিষয়েই তার অগাধ পান্ডিত্য ছিল। পল্লীবাংলার আলোছায়ায় বেড়ে ওঠা একটি বিদগ্ধ প-িত খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করেছেন, বাঙালিয়ানা ছেড়ে কখনও সাহেব হওয়ার প্রবণতা তার মধ্যে ছিল না।

অসংখ্য মানুষ তার সানি্নধ্যে এসে আলোকিত হয়েছেন, তার কাছে লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। কিন্তু নিজে কিছুই লিখে যাননি। কিন্তু তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক। কিংবদন্তিতুল্য এ মনীষীর আজ মৃত্যুদিবস। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ১৯১৪ সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার পারাগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল আলি একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।

১৯৩১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর পাস করেন এবং সেই বছর একজন প্রভাষক হিসেবে ওই বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তী সময় বিভাগটি ভেঙে গেলে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। তিনি অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগেও পড়াতেন।

অন্য খবর  দোহার নবাবগঞ্জে ছাত্রলীগের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এঅধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে পিএইচডি করতে লন্ডন গমন করেন। কয়েক বছর কাজ করার পর লাস্কি পরলোকগমন করায় তার থিসিস মূল্যায়ন করার মতো কেউ নেই এ বিবেচনায় তিনি থিসিস জমা না দিয়েই অর্থাৎ কোনো ডিগ্রি ছাড়াই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি একজন সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে এ বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ব্যক্তি জীবনে আবদুর রাজ্জাক একজন অকৃতদার মানুষ ছিলেন। তিনি সবাইকে জ্ঞানের কথা বলে আকৃষ্ট করতেন। এটা ছিল তার একটা বিশেষ গুণ। খুব ভালো রান্না করতে পারতেন। নিজেই বাজার করতেন। ছিলেন তুখোড় দাবারু।

বেশিরভাগ সময়ই পড়াশোনায় নিমগ্ন থাকতেন। তার বইয়ের অভাব ছিল না। কারণ বিপুল বইয়ের এক সংগ্রহ তিনি গড়ে তুলেছিলেন। অন্যদের পড়ার জন্য নিজের লাইব্রেরি থেকে বই বের করে দিতেন। লাইব্রেরিটার কোনো ক্যাটালগ হয়নি। তবু কোন বই কোনখানে আছে, সেটা তিনি জানতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ছিল তার গভীর উচ্চাশা। তাই ভালো শিক্ষক সংগ্রহ করা হয়ে উঠেছিল তার কাজের অন্যতম অংশ। তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। বাসায় তিনি লুঙ্গির সঙ্গে শার্ট পরতেন। গামছা ব্যবহার করতেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে আসতেন।

অন্য খবর  মিজানুর রহমান শমশেরীর কবিতা: ধানক্ষেত : তুমি আর আমি, অস্পষ্ট জননী 

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক অল্প কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কিছুই রচনা না করলেও তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে কিংবদন্তির খ্যাতি অর্জন করেন। আহমদ ছফা তাকে নিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ নামে একটি বই রচনা করেছেন। এছাড়া সরদার ফজলুল করিম তার সঙ্গে আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা।’ সলিমুল্লাহ খান তার বক্তৃতা নিয়ে সমালোচনামূলক একটি বই লিখেছেন। তার ‘বাংলাদেশ : জাতির অবস্থা’ বক্তৃতাটি বাঙালি জাতির সত্তার আত্মানুসন্ধানীর অনন্য পাঠ হিসেবে বিবেচনাযোগ্য।

সম্প্রতি তার পিএইচডি থিসিস “Political Parties in India” নামে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭৩ সালের প্রথমদিকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি প্রদান করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করে।

আপনার মতামত দিন