মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন মিলারবক্সিং কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে বোধহয় খুব কম তথ্যই আছে যা ভক্তদের অজানা। অনেকেই জানেন, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মোহাম্মদ আলী। অনেকের কাছে সর্বকালের সেরা হিসেবে বিবেচিত এই মুষ্টিযোদ্ধা তিন বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী ছিলেন। তবে তার ব্যাপারে কয়েকটি এমন তথ্য রয়েছে যা গুটিকয়েক মানুষেরই বোধহয় জানা আছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে সে তথ্যগুলোই জানিয়েছেন মোহাম্মদ আলীর বন্ধু ডেভিস মিলার। আলীর জীবনী নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি। সিএনএন-এর সে প্রতিবেদনের আলোকে আলী সম্পর্কে ৫টি কম জানা তথ্য তুলে ধরা হলো-
একবার নয় একাধিবার নাম পরিবর্তন করেছিলেন মোহাম্মদ আলী: এ কথাটি অনেকেরই জানা যে ১৯৬০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর ক্যাসিয়াস ক্লে নাম পরিবর্তন করে নিজের নাম মোহাম্মদ আলী রাখেন এই কিংবদন্তী বক্সার। তবে ডেভিস মিলার বলছেন, মোহাম্মদ আলী নামের আগে ক্যাসিয়াস ক্লে নিজের অন্য একটি নাম রেখেছিলেন। মিলার বলেন, কেনটাকিতে জন্ম নেওয়া ক্যাসিয়াস ক্লে পরবর্তীতে নেশন অব ইসলামে যোগ দেওয়ার পর মোহাম্মদ আলী নাম নেন বলে অনেকেরই জানা। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন যে মোহাম্মদ আলী নামের আগে অন্য একটি নাম রেখেছিলেন তিনি। সেটি হলো ক্যাসিয়াস এক্স। ১৯৬৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সনি লিস্টনকে হারানোর পরই এ নাম রাখা হয়। কিন্তু এর দুই সপ্তাহ পর তিনি ঘোষণা দেন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এলিজা মোহাম্মদ (যিনি ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নেশন অব ইসলামকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন) তাকে নতুন নাম দিয়েছেন। আর সেটি হলো-মোহাম্মদ আলী।
তিনি ছিলেন সুফি: ১৯৬৭ সালের ২৮ এপ্রিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান মোহাম্মদ আলী। ঐদিন মার্কিন সেনাবাহিনী অন্য ১১ জন কৃষ্ণাঙ্গের সঙ্গে আলীকেও নিয়ে যায় টেক্সাসের পুরনো এক পোস্ট অফিসে। মার্কিন আইনের আওতায় তাদের বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। সেখানকার একটি কক্ষে তাদের ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য শপথ পড়তে বাধ্য করার চেষ্টা চলে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে না চাওয়ার পেছনে আলী যে কারণগুলোর উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে ধর্মীয় কারণ অন্যতম। মিলার জানান, শুরুতে মোহাম্মদ আলী নেশন অব ইসলামের আফ্রিকান-আমেরিকানপন্থী লক্ষগুলো বাস্তবায়নে কাজ করতেন। ২০০৫ সালের দিকে নিজেকে সুফি হিসেবে ঘোষণা করেন আলী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ইসলামের বিভিন্ন ধারার মধ্যে সুফিবাদের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি সংলগ্নতা বোধ করেন তিনি।
মিলার বলেন, ‘সন্দেহাতীতভাবে সুফিবাদ একটি শান্তিপূর্ণ ধারা। সুফিরা বিশ্বাস করেন, ইচ্ছে করে কোনও মানুষের ক্ষতি করাটা গোটা মানবতার জন্য, আমাদের প্রত্যেকের জন্য এবং গোটা বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর। আর এ বিশ্বাস আলীর ক্ষেত্রে যথাযথ ছিল। কেননা, সুফিবাদের কথা জানার আগে থেকেই সুফিদের মতো করেই চলতেন আলী।’
বক্সিংয়ে ফেরত আসতে আলীর সংগ্রাম: ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতার জন্য আলীর হেভিওয়েট টাইটেল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া প্রায় চার বছরের জন্য বক্সিং থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। তিন বছর সাত বিরতির পর ২৮ বছর বয়সে টিকেও’র বিরুদ্ধে তৃতীয় রাউন্ডে সফলভাবে জয়ী হওয়ার কথা ভেবেছিলেন আলী। কিন্তু তা হয়নি। মিলার বলেন, ‘আলীর হাতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কেবল ছয় সপ্তাহ সময় ছিল। প্রশিক্ষণের সময় আলীর বাল্যবন্ধু এবং সাবেক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন জিমি এলিস তার পাঁজরের হাঁড় ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও সে লড়াইয়ের দিন-ক্ষণ পাল্টাননি আলী। আহত অবস্থাতেই বক্সিংয়ে অংশ নেন। কারণ তার আশঙ্কা ছিল, যদি সেভাবে খেলায় অংশ না নেন তাহলে হয়তো আর কোনওদিন খেলতে পারবেন না।’
পারকিনসন্স রোগ থেকে নতুন যোগাযোগের শিক্ষা নেন আলী: ১৯৮৪ সালে ৪২ বছের বয়সে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হন আলী। মিলার জানান, এ রোগ থেকেই নতুন যোগাযোগের কৌশল শিখেছিলেন এই মুষ্টিযোদ্ধা। হাত, আঙ্গুল, মুখভঙ্গি, চোখ দিয়ে যোগাযোগ করতেন তিনি।
চমৎকার জাদুকর ছিলেন আলী: মিলার জানান, ‘পারকিনসন্স রোগ নিয়ে আলী বিভিন্ন জাদু দেখিয়ে সবাইকে চমকে দিতেন। তিনি তার মাথায় একটি লাল কাপড় রেখে পরে তা অদৃশ্য করে দিতেন। হাতে কয়েন নিয়ে কখনও তা অর্ধেক করে ফেলতেন আবার কিছুক্ষণ পর পুরো কয়েন দেখাতেন।’ সূত্র: সিএনএন