এ যেন রুপকথাকে হার মানায়। এ যেন এক সিনেমার স্ক্রিপ্ট। আর সে সিনেমার নায়ক দোহার থানা পুলিশের অফিসার ইন চার্জ সাজ্জাদ হোসেন ও তার সহযোগী অন্য পুলিশ সদস্যরা। ২১ এপ্রিল দিবাগত রাত। রাত আনুমানিক ১টা বাজে। পুরোদোহারবাসি তখন ঘুমে বিভোর। জেগে রয়, পাহারা দেয় দোহারকে দোহার থানা পুলিশ। তখন জয়পাড়া বাজার ডিউটি অবস্থায় দোহার পুলিশের একটি টহল দল দেখতে পায় – ২ জন মহিলা এবং ১ পুরুষ, একজন প্রসব বেদনায় কাতর গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তখন টহলরত দলের এ.এস.আই তুহিন পারভেজ তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাদের সহোযোগিতায় এগিয়ে আসেন এবং মহিলার প্রসব যন্ত্রণা দেখে দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব সাজ্জাদ হোসেন এবং অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) জনাব আরাফাত হোসেন কে তৎক্ষনাৎ ফোনে তাদের অবস্থা জানান। সে মূহুর্তে অফিসার ইন চার্জ সাজ্জাদ হোসেন দায়িত্বরত অফিসারকে সার্বিক সহোযোগিতার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন এবং তিনি নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে ফোন দেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। অফিসার তুহিন প্রসব বেদনায় কাতর মহিলাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ।
কিন্তু দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দায়িত্বরত ডাক্তার বলেন যে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ -সুবিধা নেই উনাকে অন্য কোথাও নিয়ে গেলে আরো ভালো চিকিৎসা পাবেন । পরবর্তীতে ওই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ ওই মহিলাকে ওখান থেকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিকটস্থ জয়পাড়া ক্লিনিকে নিয়ে যান। তখন রাত দুটো বাজে। কিন্তু ক্লিনিকে গাইনি ডাক্তার নাই।
পুনরায় ওসি সাজ্জাদ হোসেনের নির্দেশক্রমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ডাক্তার শিউলি আক্তার কে পুলিশের গাড়িতে করে জয়পাড়া ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয় । তারপর তিনি ওই রোগীকে অবজারভেশন করেন এবং তার চিকিৎসা শুরু করেন। ওই সময় ডাক্তার রোগীর অবস্থা দেখে বলেন যে রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না দুজন রক্তদানকারী প্রয়োজন দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে হবে।
তখন পুনরায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানালে তিনি রাতের থানায় ডিউটি অফিসার শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এর মাধ্যমে থানার যত পুলিশ সদস্য রয়েছে তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন এবং এদের ভেতর থেকে দুইজন রক্ত দাতা সংগ্রহ করেন। রাত যখন তিনটা বাজে তখন থানা থেকে 2 জন পুলিশ সদস্য মহিলাকে রক্ত দানের উদ্দেশ্য হসপিটালে যান এদের মধ্যে একজন প্রবেশনার সাব-ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান এবং আরেকজন কনস্টেবল মোসলেম। তাদের ব্লাড গ্রুপ বি পজেটিভ ক্রস ম্যাচ করে।
তারপরে ডাক্তার শিউলি আক্তার চিকিৎসা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলেন এই রোগীকে এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না । বাচ্চার ওজন তিন কেজি 800 গ্রাম এবং মহিলার শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে ডাক্তার তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে অফিসার ইনর্চাজকে অবহিত করা হলে তিনি দায়িত্বরত এএসআই তুহিনকে নির্দেশ দেন । তাহার নির্দেশক্রমে একটা এম্বুলেন্স ভাড়া করে সুচিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ এস আই তুহিন এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন। অদ্য 23 এপ্রিল আনুমানিক বেলা পৌনে 2 ঘটিকার সময় তাদের একটা কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তারা দুজনেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।
অফিসার ইনচার্জ তাদের আশ্বস্ত করেন বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা আমাদের পক্ষ থেকে অব্যাহত থাকবে। চলমান মহামারীর এই পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশ সদস্যরা সর্বদা যে কোন অবস্থায় মানুষের সেবা দিতে প্রস্তুত আছি।
তিনি আরো বলেন, এই মহামারিতে আমরা জানিনা বাড়িতে ফিরে যেতে পারবো কিনা আমাদের মা বাবা ছেলে সন্তানের কাছে। কিন্তু আমরা চাই আপনারা আপনাদের ছেলে সন্তান নিয়ে ভালো থাকুন। তাই আপনাদের সেবা করার জন্য আমরা বাইরে আছি দয়া করে আপনারা সবাই ঘরে অবস্থান করুন নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন।
আপনার মতামত দিন