আজ উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্মদিন

1279

আজ উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্মদিন। ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকার মনে করা হয়। তাকে ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং ‘বার্ড অফ অ্যাভন’ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। তার যে রচনাগুলি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৩৮টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, দুটি দীর্ঘ আখ্যান কবিতা এবং আরও কয়েকটি কবিতা। কয়েকটি লেখা শেক্সপিয়র অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে যৌথভাবেও লিখেছিলেন। অন্য যে কোনো নাট্যকারের রচনার তুলনায় অধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে তার নাটক।

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের পিতা জন শেক্সপিয়র ছিলেন একজন সফল গ্লোভার ও অল্ড্যারম্যান। তার আদি নিবাস ছিলো স্নিটারফিল্ডে। শেক্সপিয়রের মা মেরি আরডেন ছিলেন এক ধনী কৃষক পরিবারের সন্তান। তার জন্মের সঠিক তারিখটি জানা যায় না। তবে ২৩ এপ্রিল সেন্ট জর্জ’স ডে’র দিনে তার জন্মদিন পালন করার প্রথা রয়েছে। শেক্সপিয়র তার পিতামাতার আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।

সে যুগের কোনো লিখিত প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, অধিকাংশ জীবনীকার মোটামুটি একমত যে, শেক্সপিয়র সম্ভবত স্ট্র্যাটফোর্ডের কিংস নিউ স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৫৫৩ সালে এই মুক্ত বিদ্যালয়টি সনদ পায়। স্কুলটি শেক্সপিয়রের বাড়ি থেকে পৌনে এক মাইল দূরে ছিল। এলিজাবেথীয় যুগে গ্রামার স্কুলগুলির মান সর্বত্র সমান ছিল না। তবে স্কুলগুলির পাঠ্যক্রম সারা ইংল্যান্ডেই আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা ছিল। এই কারণে মনে করা হয়, স্কুলে লাতিন ব্যাকরণ ও ধ্রুপদি সাহিত্যের বিস্তারিত পাঠ দেয়া হতো।

অন্য খবর  ইতিহাসের এই দিনে: ৩১ জানুয়ারি

শেক্সপিয়রের জন্ম ও বেড়ে ওঠা স্ট্যাটফোর্ড অন-অ্যাভনে। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি অ্যানি হ্যাথাওয়েকে বিয়ে করেন। অ্যানির গর্ভে সুসান এবং হ্যামনেট ও জুডিথ নামে  শেক্সপিয়রের তিনটি সন্তান জন্মেছিলো। এদের মধ্যে আবার হ্যামনেট ও জুডিথ ছিলো যমজ।

১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অভিনেতা ও নাট্যকার হিসেবে লন্ডনে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। লর্ড চেম্বারলেইনস ম্যান নামে একটি নাট্যকোম্পানির তিনি ছিলেন সহ-সত্ত্বাধিকারী। এই কোম্পানিটিই পরবর্তীকালে কিংস মেন নামে পরিচিত হয়। ১৬১৩ সালে তিনি নাট্যজগত থেকে সরে আসেন এবং স্ট্র্যাটফোর্ডে ফিরে যান। তিন বছর বাদে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছিলো। শেক্সপিয়রের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নথিভুক্ত তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না। তার চেহারা, যৌনপ্রবৃত্তি, ধর্মবিশ্বাস, এমনকি তার নামে প্রচলিত নাটকগুলি তারই লেখা, নাকি অন্যের রচনা তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে।

শেক্সপিয়রের পরিচিত রচনাগুলির অধিকাংশই মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। তার প্রথম দিকের রচনাগুলি ছিলো মূলত মিলনান্তক ও ঐতিহাসিক নাটক। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে তার দক্ষতায় এই দুটি ধারা শিল্পসৌকর্য ও আভিজাত্যের মধ্যগগনে উঠেছিলো। এরপর ১৬০৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানত কয়েকটি বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেন। এই ধারায় রচিত তার হ্যামলেট, কিং লিয়ার ও ম্যাকবেথ ইংরেজি ভাষার কয়েকটি শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। জীবনের শেষ পর্বে তিনি ট্র্যাজিকমেডি রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এই রচনাগুলি রোম্যান্স নামেও পরিচিত। এই সময় অন্যান্য নাট্যকারদের সঙ্গে যৌথভাবেও কয়েকটি নাটকে কাজ করেন তিনি।

অন্য খবর  মিজানুর রহমান শমশেরীর কবিতা

শেক্সপিয়রের জীবদ্দশায় প্রকাশিত নাটকগুলির প্রকাশনার মান ও প্রামাণ্যতা সর্বত্র সমান ছিল না। ১৬২৩ সালে তার দুই প্রাক্তন নাট্যসহকর্মী দুটি নাটক বাদে শেক্সপিয়রের সমগ্র নাট্যসাহিত্যের ফার্স্ট ফোলিও প্রকাশ করেন।

তার সমকালে শেক্সপিয়র ছিলেন একজন সম্মানিত কবি ও নাট্যকার। কিন্তু মৃত্যুর পর তার খ্যাতি হ্রাস পেয়েছিলো। অবশেষে ঊনবিংশ শতাব্দীতে খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। রোম্যান্টিকরা তার রচনার গুণগ্রাহী ছিলেন। ভিক্টোরিয়ানরা রীতিমতো তাকে পূজা করতেন। জর্জ বার্নার্ড শ’র ভাষায় যা ছিল চারণপূজা। বিংশ শতাব্দীতেও গবেষণা ও নাট্য উপস্থাপনার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার রচনাকে পুনরাবিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়। আজও তার নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুচর্চিত। সারা বিশ্বের নানা স্থানের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা আঙ্গিকে এই নাটকগুলি মঞ্চস্থ হয়ে থাকে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে এক গবেষক ভুল করে এই তারিখটিকে শেক্সপিয়রের জন্মদিন বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে তারিখটি জীবনীকারদের কাছে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম শেক্সপিয়র ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান।

আপনার মতামত দিন