নবাবগঞ্জে কবির স্মৃতি বলতে আছে শুধু সেই মসজিদটি: আজ মহাকবি কায়কোবাদের ৬৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

774

আজ মহাকবি কায়কোবাদের ৬৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহাকবি কায়কোবাদ। যার কথা শুনলেই মনে পড়ে যায় তার সেই সুবিখ্যাত আযান কবিতার কয়েকটি লাইন- “কে ঐ শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর।”  ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেরুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কায়কোবাদ। তার প্রকৃত নাম কাজেম আলী কোরেশী। পিতা শাহামতউল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী। ঢাকার পোগজ এবং সেন্ট গ্রেগরী স্কুলে কয়েক বছর পড়াশোনা করে স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। সেখানে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষার আগ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে তিনি তার গ্রাম নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়ায় ফিরে আসেন। সেখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য সারাদেশের মানুষের কাছে কবি সমাদৃত হলেও তার জন্মন্থান আগলা গ্রামে গেলে সেটা বোঝার উপায় নেই। সেখানে কবির কোনো স্মৃতিচিহ্নই বলতে গেলে আর অবশিষ্ট নেই। কবি মারা যাওয়ার পর পরই তার পৈতৃক বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাড়ির বাদবাকি অংশও বেদখল হয়ে যায়। এখন থাকার মধ্যে আছে শুধু কবির বাড়ির সামনের প্রাচীন সেই মসজিদটি, যে মসজিদের আযান শুনে আযান কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। বাংলা ১৩০০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার মজিদ মিয়া। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নান্দনিক চীনামাটির কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি। কবি এই মসজিদে নামায পড়তেন বলে স্থানীয় লোকদের কাছে জানা যায়।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে আন্তঃস্কুল বার্ষিক ক্রীড়া

কবির স্মৃতি রক্ষায় ১৯৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে অধিকাংশই আর টিকে থাকেনি। ১৯৭২ সালে সুবিদ আলী নামে এক ব্যক্তি কায়কোবাদের সম্মানে আগলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কায়কোবাদের লেখা কোনো বই না থাকায় শিক্ষার্থীরা কায়কোবাদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে কিছু জানতে পারছে না। এমনকি তারা কায়কোবাদ সম্পর্কেও তেমন কিছু জানে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে  আরো জানা যায়, কায়কোবাদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় না এই বিদ্যালয়ে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি  এক রকম ক্ষিপ্তভাবেই বলেন, এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি পরিবারের লোকজনের কোন অবদান নেই। মহাকবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী কেন পালন করা হয় না, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য- “বাজারে কায়কোবাদের অনেক বই রয়েছে, সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ আছে। কাজেই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানের দরকার নেই।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে চত্বরটি নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, কবি কায়কোবাদের নামে একটি জাদুঘর করার জন্য শিল্পকলা একাডেমীতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই  জাদুঘরের কাজ শুরু হবে।

অন্য খবর  ১৯১২ সাল থেকে দোহার-নবাবগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে যারা

নবাবগঞ্জে কবির স্মৃতি বলতে আছে শুধু সেই মসজিদটি: আজ মহাকবি কায়কোবাদের ৬৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

এদিকে কবি কায়কোবাদের নাতি টুটুল আলম কোরেশী বলেছেন, কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে তার নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হলে কবির সম্পর্কে জানতে পারবেন এ অঞ্চলের মানুষ।

মহাকবি কায়কোবাদ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ অবলম্বনে রচনা করেন তার অমর মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’। এটিকে তার শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা মহাকবি কায়কোবাদ। জীবদ্দশায় প্রকাশিত তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হলো:কুসুমকানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৫), শিবমন্দির (১৯২২), মহাশ্মশান (১৯০৪), অমিয়ধারা (১৯২৩)। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়, প্রেমের ফুল (১৯৭১), প্রেমের বাণী (১৯৭০), প্রেম পারিজাত (১৯৭০), মন্দাকিনী ধারা (১৯৭১) এবং গাউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ (১৯৭৯)। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ থেকে তাকে কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ এবং সাহিত্য রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ইন্তেকাল করেন এই মহাকবি।

আপনার মতামত দিন