মো. সাহাবুল হক : বিশ্বের সব দেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য অবারিত সুযোগ করে দিয়েছে চীন। দেশটিতে স্কলারশিপে গেলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে চীনে পড়াশোনা করতে গেছে ৪ লাখ ৪২ হাজার শিক্ষার্থী। ২০০০ সালে যা ছিল ৫২ হাজার ১৫০ জন। ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ৫ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পড়াশোনা করছে আন্ডারগ্রাজুয়েটে, ১৪ শতাংশ মাস্টার্স ডিগ্রি এবং পিএইচডিতে ও ৩০ শতাংশ রয়েছে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি লেভেলে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ চায়নিজ ভাষা শিখতে চীনে যায়। আর বাকিদের আগ্রহ শিক্ষা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃষিতে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ চীনে যায় স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে, বাকি ৬০ শতাংশ যায় ব্যক্তিগত খরচে। চীনের রাজধানী বেইজিং এবং সাংহাই শহর বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গা। এই দুই জায়গার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ইংলিশ টট প্রোগ্রাম থাকে। বেল্ট অ্যান্ড রোড স্কলারশিপের আওতায় চায়না সরকার প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০ হাজার স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে। এ সুবিধা পাবে প্রকল্পের অধীন ৬৪টি দেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এ দেশগুলো থেকে প্রতি বছর ২ লাখ শিক্ষার্থী চীনে পড়তে যাবে বলে ধারণা করছে চায়না সরকার।
যেভাবে আবেদন করা যাবে : স্কলারশিপের জন্য দুইভাবে আবেদন করা যাবে। সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আবার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। দূতাবাসের স্কলারশিপ থাকে নির্দিষ্ট এবং প্রতিযোগিতামূলক।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপগুলো হলো- কাস টাওয়াস স্কলারশিপ, চায়নিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি), রোড অ্যান্ড বেল্ট স্কলারশিপ, মফকম স্কলারশিপ, কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, চায়নিজ লোকাল গর্ভনমেন্ট স্কলারশিপ, ফরেন গর্ভনমেন্ট স্কলারশিপ, বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপ এবং এন্টারপ্রাইজ স্কলারশিপ। তবে সবচেয়ে বেশি স্কলারশীপ দেয় সিএসসি।
আর্থিক দিক দিয়ে কাস টাওয়াস স্কলারশিপ ও ইয়েস চায়না স্কলারশিপ ভালো। তারপরেই সিএসসি এবং মফকম স্কলারশিপ। কাস টাওয়াস শুধু পিএইচডি স্কলারশিপ দেয়। বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্যই মূলত এই স্কলারশিপ। কাস টাওয়াসে আগে থেকে শিক্ষকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। এই স্কলারশিপ পেতে ন্যূনতম যোগ্যতা মাস্টার্স পাস এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ থাকলে এই স্কলারশিপ পাওয়া সহজ হয়। বর্তমানে সিএসসি এবং কাস টাওয়াস স্কলারশিপে আবেদন করার সময় চলছে। মফকম স্কলারশিপ দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের মাধ্যমে।
স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে যা যা প্রয়োজন : অন্তত ছয় মাসের মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, নোটারি কর্তৃক সত্যায়িত সব নম্বরপত্র এবং সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ফরেন মেডিকেল সার্টিফিকেট, স্টাডি প্ল্যান, আইইএলটিএস সার্টিফিকেট থাকলে ভালো না হলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা হয়েছে এমন সার্টিফিকেট, দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনপত্র, স্কলারশিপের জন্য আবেদনপত্র (পূরণ করা)।
কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু অনলাইনে আবেদন করলেই হয়, আবার কোথাও অনলাইনের আবেদনের সঙ্গে হার্ডকপিও পাঠাতে হয়। স্কলারশিপের আবেদন সংক্রান্ত সবকিছু ওয়েবপেজে উল্লেখ থাকে। স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য ওয়েবপেজগুলো দেখা যেতে পারে।
সিএসসি স্কলারশিপ (www.csc.edu.cn)।
কাস টাওয়াস স্কলারশিপ (www. twas.org)।
মফকম স্কলারশিপ (www.cscscholarship.org/mofcon)।
[লেখক : পিএইচডি গবেষক, বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সটি, বেইজিং, চীন এবং সহযোগী অধ্যাপক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। E-mail: shahabu14@yahoo.com]