প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। ‘ভালবাসা দিবস’ বা ‘ভ্যালেনটাইন’স ডে’ এদিন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাদের প্রিয়জনকে উপহার ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে থাকেন।
যেভাবে ভালবাসা দিবস এলো: দিবসটি পালনের মূলে রয়েছে প্রায় সাড়ে সতেরশো বছর পূর্বের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা।
প্রায় ২৭০ সালের তখনকার দিনে ইটালীর রোমে শাসন করতেন রাজা ক্লডিয়াস-২। তখন রাজ্যে চলছিলো সুশাসনের অভাব, আইনের অপশাসন, অপশিক্ষা, স্বজন-প্রীতি, দূর্নীতি এবং কর বৃদ্ধি। এতে সাধারন জনগন ফুঁসছিলো। রাজা ক্লডিয়াস-২ তার সুশাসন ফিরিয়ে থানার জন্য রাজ দরবারে তরুন-যুবকদের নিয়োগ দিলেন। আর যুবকদের-কে দায়িত্বশীল ও সাহসী করে গড়ে তোলার লক্ষে তিনি রাজ্যে যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কারন, রাজা বিশ্বাস করতেন বিয়ে মানুষকে দূর্বল ও কাপুরুষ করে।
বিয়ে নিষিদ্ধ করায় পুরো রাজ্য অসন্তোষ সৃষ্টি হলো। এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক যাজক গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেন; তিনি পরিচিতি পেলেন ‘ভালবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে আটক করা হল।
জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের সাথে পরিচয় হয় জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের সাথে। আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি তাকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন পরবর্তীতে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। রাজা তার এই আধ্যাতিকতার সংবাদ শুনে তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং তাকে রাজকার্যে সহযোগীতার জন্য বলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানান। এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন।
মৃত্যু দন্ডের ঠিক আগের মূহুর্তে ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চান। তিনি মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখা হয় ‘From your Valentine’ এটি ছিলো এমন একটি শব্দ যা হৃদয়কে বিষাদগ্রাহ করে।
অতঃপর ১৪ ই ফেব্রুয়াররি, ২৭০ ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। পরবর্তীতে ভ্যালেন্টাইনকে সেইন্টহুড খেতাব দেয়া হয়। প্রতি বছর খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ১৪ ফেব্রুয়ারি “সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের পার্বন” পালন করে।
পরবর্তীকালে এটি পরিণত হয় ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবসে’। প্রথমবার ভালবাসা দিবস পালিত হয় ৪৯৬ সালে। ভালবাসা দিবসের সাথে ইউরোপীয়ান প্যাগান উৎসেরও সম্পর্ক রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের বিষয়টি বেশ প্রাচীনকালের ঐতিহ্য, যা রোমান উৎসব থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল – আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়।
উদযাপনের অংশ হিসাবে ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তোলেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠত, তারা দুজন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন বলে মনে করা হয়। অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল।