দশম জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ ) আসনে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্র্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানকে বর্জনে প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকার দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুলের বাসায় তার সভাপতিত্বে শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর এতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছে দোহার নবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগ। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সালমা ইসলাম সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা আওয়ামিলিগের সভাপতি সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল নিউজ৩৯ কে বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে। জনগণ ও নেতা-কর্মি বিচ্ছিন্ন কোন নেতাকে জনগণ মেনে নেবে না। আমরা বিষয়টি দলীয় ফোরামে তুলবো। নবাবগঞ্জেও আজ মান্নান খান তার এহেন অন্যায় কৃত কর্মের জন্য ইতিমধ্যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হলে তার নির্বাচন বয়কট করা খুবই জরুরি। তার দুর্নীতির দায় দোহার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বহন করবে না।
দোহার উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলী আহসান খোকন শিকদার নিউজ৩৯ কে বলেন, সততার কথা বললেও আবদুল মান্নান খানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন দিক আজ মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশবাসী জানে আর তিনি এর কোন প্রতিবাদও করেননি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার ভাই নেতা-কর্মিদের সাথে বাজে ব্যবহারও করেছেন। দল ক্ষমতায় থাকা সত্বেও নেতা-কর্মিরা কোন সুবিধা পায়নি। তাই জনগণ আজ আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকলেও মান্নান খানকে বর্জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং কারো অন্যায়ের দায়ভার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেবে না।
ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক নিউজ৩৯ কে বলেন, আসলে নেত্রী যাকে মনোনীত করেছেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাই হচ্ছে দলীয় আনুগত্য। আমি দল করি অথচ সিদ্ধান্ত মানি না এটাতো দলীয় শৃঙ্খলা লংঘন। আর দলে যদি ভুল কেউ করে তবে তাকে সংশোধন করাটাইতো সর্বাগ্রে প্রয়োজন। তারপরও যদি আমাদের মাঝে কোন দূরত্ব থাকে তবে অবশ্যই আমরা তা দূর করবো। আর মনোনীত প্রার্থীর ব্যাপারে কারও কোন আপত্তি থাকলে উচিত ছিল আগেই বিষয়টি তোলা ও সমাধান করা।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানকে ফোন দিলেও তিনি তা রিসীভ করেননি।
আগামী মঙ্গলবার দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগ জয়পাড়াতে একটি বিশাল জন সমাবেশের মাধ্যমে মান্নান খানকে বর্জনের সভা করবে বলে একটি নির্ভরশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলীয় সূত্র নিউজ৩৯কে জানায়, শুক্রবার সভায় বক্তারা সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, নির্যাতন-নিপীড়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও ভাই মোতালেব খানের নির্যাতনের প্রতিবাদে দোহার আওয়ামী লীগের নেতারা তার নির্বাচনী কর্মসূচি বয়কট করবে। আবদুল মান্নান খান আওয়ামী লীগের ব্যানারে মন্ত্রী হয়ে দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্রে মেতে উঠেন।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত মনে করে তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। অবৈধ ক্ষুধার তারনায় তার অপকর্ম ও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ায় দোহার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে লজ্জিত। সভায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেতাদের অবমূল্যায়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সভায় নেতারা আরও বলেন, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হলে তার নির্বাচন বয়কট করা খুবই জরুরি। তার দুর্নীতির দায় দোহার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বহন করবে না। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে মান্নান খানের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া হবে বলেও সভায় জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি বজলুর রহমান কামাল, দোহার উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলী আহসান খোকন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনার কলি পুতুল, সহ-সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা, সহ-সভাপতি মোল্লা মোঃ বেলাল হোসেন, করম আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, মোঃ আওলাদ হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইয়াহিয়া খান ঝুনু, জয়পাড়া কলেজ শাখার সভাপতি মোশাররফ হোসেন, পৌর যুগ্ম-আহ্বায়ক জয়সহ অঙ্গসংঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা।