ভয়েস৩৯-এর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কিছু কথা …

776

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভুমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জৈষ্ঠ-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সম্মানে সাদা দুধে-ভাতে।

-একটি পতাকা পেলেঃ হেলাল হাফিজ

ধন্যবাদ সবাই-কে; যারা সাথে ছিলেন এবং ছিলেন না উভয়কে। ভয়েস৩৯ অবশেষে আজ তার শীর্তাত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ এবং অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রমের অনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। ভয়েস৩৯ এর এই কার্যক্রমে যারা পাশে ছিলেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য যুগিয়েছেন তাদের কাছে আমরা ঋনী। তাদেরকে তাই এই কার্যক্রম নিয়ে ২/১ টি কথা না বললেই নয়।

প্রবাসী অধ্যুষিত দোহর-নবাবগঞ্জে আজ ধংসের পথে যুব-সম্প্রদায়। মাদক, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিদেশি টাকার যথেচ্ছা অপব্যবহার, পরকীয়া এবং ইভটিজিং এতোটাই প্রকট যে আগামী ৪/৫ বছর পরে একটি সুন্দর সমাজ কল্পনা করাটাও কষ্টের ব্যাপার। এর দায় শুধু আমাদের নয়, আপনারা যারা অভিভাবক তাদেরও।

আমরা যারা news39.net এ কাজ করি, তারা এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে যে কি পরিমান ভালোবাসা নিয়ে কাজ করি, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না! এখানে দোহর- নবাবগঞ্জের সবাইকে একসাথে একটি পরিবারবদ্ধ করার প্রয়াস থেকেই আমাদের কো-অর্ডিনেটর এ্যাড. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ কাঞ্চনের উদ্যোগে সংগঠিত হয় ভয়েস৩৯; আমাদের চেষ্টা ছিলো দোহার-নবাবগঞ্জের যুবকেরা যে কোন কল্যানকর কাজে ঐকবদ্ধ হতে পারে, তারা হতে পারে সমাজের অনুকরনীয় দৃষ্টীন্ত তা তুলে ধরতে। যাদেরকে দেখেছি সন্দেহের দৃষ্টিতে আমাদের এই কার্যক্রমকে দেখতে, তারাই আবার পরে এসেছেন উৎসাহ দিতে। অবাক করার বিষয় এই যে, আমাদের সবার গড় বয়স ২৪ এরও নীচে।

১লা জানুয়ারী, ২০১৩। সবাই যখন আগের দিন থার্টি ফাষ্ট নাইট নিয়ে ব্যাস্ত; আমরা তখন দান বাক্স বানাতে ব্যাস্ত। ১লা জানুয়ারী সকাল বেলা – “আসুন, বছরের প্রথমদিন একটি ভালো কাজ করি। আপনার একটি সহযোগীতর হাত বাঁচিয়ে দিতে পারে একজন অসহায় শীতার্তকে।” শ্লোগান দিয়ে আমরা জয়পড়া, মেঘুলা কলেজের ৩০/৩৫ জন ছাত্র ও ভয়েস৩৯ এর সদস্যরা র্যালী নিয়ে নেমে পড়ি উজজেলা গেটের সামনে। মনে পড়ছে, তুষার নামে সেই ছেলেটির কথা যে টাকা দিতে না পেরে নিজের গায়ের সোয়েটারটি খুলে দিয়ে যায়। মনে পড়ছে, সেই দু’জন মহিলার কথা যারা হাত মোজা থেকে টাকা বের করে একেবারে গোপনে জমা দিলেন। কি অকৃত্রিম ভালবাসা মানুষের মানুষের জন্য। চোখ যেন জলে ভিজে যায় বার বার। মাত্র তিন ঘন্টার চেষ্টায় আমরা সংগ্রহ করেছি সাড়ে বার হাজার টাকা। অথচ সবাইকে খাওয়ানো হয়েছে ভয়েসের উদ্যোগে একটিমাত্র চকলেট। কারন এটা স্বেচ্ছাশ্রম……..

অন্য খবর  মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হচ্ছে কেন

এরপর যা ঘটেছে তা আশাতীত। দিনে দিনে একের পর এক ব্যাগ ভর্তি কাপড় জমা হতে লাগলো। ব্রুনাই থেকে বাস্তা গ্রামের কিরন ভাই পাঠিয়ে দিলেন ৫,০০০৳ । এভাবে দশদিন সংগৃহিত হলো। সর্বমোট চল্লিশ হাজার টাকা। জমা হলো প্রায় কয়েশ পুরানো কাপড়। এর মাধ্যে ৫ই জানুয়ারী মেঘুলা থেকে আমরা শুরু করি শীতবস্ত্র বিতরন। ৬ তারিখে ইসলামপুর, ৭তারিখে চর মাহমুদপুর, চর হুসেনপুর ও কার্তিকপুর আশ্রয়ন কেন্দ্রে বিতরন করা হয় শীতবস্ত্র। এরপর বিলাসপুর, জামাল চর, লটাখোলা, জয়পাড়া, বৌবাজার, বানাঘাটাতে বিতরন করা শীতবস্ত্র। প্রায় ৩৫০ এর অধিক পরিবারে আমরা পৌছে দিয়েছি কম্বল, শীতবস্ত্র ও শিশুদের জন্য ভেসলিন ক্রীম। দোহরেও যে এরকম গরীব আছে!! ভাবাই যায় না।

“যারা স্বচ্ছল, অস্বচ্ছল উভয় অবস্থাতেই দান করে, ক্রোধকে দমন করে, এবং মানুষকে মাফ করে, তারাই সফল এবং আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত।” – সূরা আল ইমরানঃ১৩৪

যারা নিজেরাই চলতে পারে না, তারাই যখন ২টাকা, ১০টাকা দেয় তখন সমাজের বিত্তশালীদের/ধনীদেরকে তাদের নিকট তুচ্ছ মনে হয়। কলেজ মোড়ের চা বিক্রেতা আনোয়ার আলী যখন ১০০টাকা দিলেন, তখন মনে হলো- আসলে অসহাদের জন্য আল্লাহ আর অসহায়রা’ই থাকেন।

এতো কিছুর মাঝেও কষ্ট পেয়েছি যখন দেখেছি একজন সুরুজ আলম সুরুজ বাদে আর কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাহায্য করেননি। আর নাজমুলহুদা আমাদেরকে দিলেন তার ব্যবহৃত এক ব্যাগ পুরানো কাপড়। এ্যাড. সালমা ইসলাম কথা দিয়ে কথা রাখেন নি, যোগাযোগ করবেন বলে আর করলেন না কামরুল হুদা। বার বার ফোন দিয়ে এবং বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানকে। তবে রাজীব শরীফ, জহিরুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, মশিউর রহমান মাখনেরা মত ছাত্র নেতারা আমাদেরকে অনুপ্রানিত করেছেন।

পরিশেষে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মোঃ জাকির হোসেনের কাছে যার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে শীতবস্ত্র বিতরনের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। যখন কম্বলের সংকটের কারনে দোহারে কোন কম্বল পাওয়া যাচ্ছিল না তখন সে নিজে পুরো ঢাকা ঘুরে নিজে সংগ্রহ করেছে কম্বল। সোহেল বাবু, ফিরোজ, টুটুল, মোরাদ ডিগ্রি পরীক্ষা চলাকলীন আমাদেরকে সময় দিয়েছে, মামুন যে ছেলেটা ঘরকুনো অথচ সেই কিনা থেকেছে সবার আগে, আর ইমরানের কথা না বললে ছোট হয়ে যেতে হয়। মায়ের অসুস্থতায় যখন মা ঢাকায় ক্লিনিকে ভর্তি, সে তখন দোহারে শত মায়ের পাশে। মুশতাক, কাদের, আকরাম, সোহাগ, শাহীন, বিকাশ, সবুজ যারা সব-সময় অর্থ ও কাপড় সংগ্রহ ও বিতরনে সর্বদা পাশে থেকেছে।

অন্য খবর  সুন্দরী প্রতিযোগিতা চায় মেয়েদের কর্পোরেট যৌনদাসী বানাতে

বিশেষ কৃতজ্ঞতা নিউজ৩৯ এর ডেস্ক রিপোর্টার হায়দারকে, ওর ছেলে মানুষী আর হাস্যরস আমাদেরকে ক্লান্ত হতে দেয়নি। বিশেষ করে প্রতিভা কোচিং সেন্টারের মেহেদী আরিফ, যিনি প্রথম আইডিয়াটা আমাদেরকে দেন, মেধাবিকাশ কোচিং সেন্টারের সুমন ও ব্যতিক্রম শিক্ষাশীলনের মশিউর এবং ডাঃ মামুন ভাই যারা অর্থ সহায়তা ও উৎসাহ দিয়ে আমাদেরক চির ঋনী করেছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়া দেশ-বিদেশের সকল শুভাকাংঙ্খী যারা সরাসরি, ফোন, ই-মেইলে বা ফেসবুকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি দোহার থানা প্রশসন ও পুলিশকে সার্বিক সহয়োগীতা করার জন্য। পরিশেষে যাদের ছাড়া এই উদ্যোগ সফল হতো না তারা হলেন সর্বাগ্রে আমাদের প্রিয় নিউজ৩৯ এর নির্বাহি সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ কাঞ্চন, প্রধান বার্তা সম্পাদক মাসুম পারভেজ রবিন , প্রকাশক মোঃ শামীম এবং সম্পাদক মোঃ তারেক রাজীব।

যে ধারা ভয়েস৩৯ চালু করলো রাস্তায় নেমে, আপনারা তা এগিয়ে নিয়ে যাবেন মানবিকতার সর্বোচ্চ শিখরে এটাই আশা করছি। শুরু করেছিলাম হেলাল হাফিজের কবিতা দিয়ে, আমরা স্বাধীনতা দেখিনি কিন্তু লাল-সবুজের এ পতাকাকে ভালো বেসে ঋনী হয়েছি ত্রিশ লাখ শহীদের কাছে। তারা জীবন দিলেন আর এনে দিলেন একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা না হয় একটি শ্রম আর সময় দিয়ে তাদের কেই অনুপ্রেরন করলাম পতাকাকে সমুন্নত রাখতে। সবাই ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিউজ৩৯ ও ভয়েস ৩৯ এর সাথে থাকুন।

সহ- কো অর্ডিনেটর ভয়েস ৩৯সবাইকে ধন্যবাদ ও কিছু কথা …

আপনার মতামত দিন