নিউজ ডেস্কঃ প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি ম্যান্ডারিন হাঁস (Mandarin Duck)। সাধারণত পূর্ব এশিয়ার নদী, হ্রদ ও জলাভূমিতে বিচরণকারী এই রঙিন হাঁসটি বাংলাদেশে অত্যন্ত বিরল। শীতকালে খাবারের সন্ধানে কিছু সংখ্যক ম্যান্ডারিন হাঁস বিভিন্ন দেশে পরিযায়ী হিসেবে আসে, তবে বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি অত্যন্ত সীমিত।
নদী ও জলাভূমিতে বর্ণিল সৌন্দর্য
বিজ্ঞানীদের মতে, ম্যান্ডারিন হাঁসের (বৈজ্ঞানিক নাম: Aix galericulata) পুরুষ প্রজাতিটি রঙের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ বহন করে। উজ্জ্বল কমলা, সবুজ, নীল ও সাদা পালকের অনন্য সাজ এদের পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর হাঁসে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, স্ত্রী ম্যান্ডারিন হাঁস তুলনামূলক কম উজ্জ্বল রঙের হলেও চেহারায় একটি আলাদা মাধুর্য বিদ্যমান।
বাসস্থান ও জীবনধারা
অধিকাংশ হাঁসের মতো পানির কিনারায় নয়, ম্যান্ডারিন হাঁস গাছের ফোকরে বাসা বাঁধে, যা এদের অন্যতম ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে, এরা একগামী (Monogamous), অর্থাৎ একবার সঙ্গী নির্বাচন করলে সাধারণত সারা জীবন একসঙ্গে থাকে। এদের এই প্রেমময় আচরণের জন্য চীন ও জাপানের সংস্কৃতিতে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
সংরক্ষণ ও হুমকি
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN)-এর লাল তালিকা অনুসারে, ম্যান্ডারিন হাঁসকে এখনো “Least Concern” বা কম বিপন্ন ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তবে, জলাভূমি ধ্বংস, বন উজাড় ও আবাসস্থলের সংকটের কারণে এদের সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশে এদের টিকে থাকার সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে পরিবেশবিদরা জলাভূমি সংরক্ষণ ও বনাঞ্চল রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয়
পরিবেশবিদরা বলছেন, দেশের জলাভূমি ও বনাঞ্চল রক্ষা করা হলে এই বিরল প্রজাতির হাঁস ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও দেখা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে—
✔ জলাভূমি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
✔ বন উজাড় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
✔ পরিযায়ী পাখিদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এ ধরনের বিরল প্রজাতির পাখি আমাদের দেশের প্রাণবৈচিত্র্যের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলবে বলে তারা আশাবাদী।