বাঁশতলা থেকে মৈনটঘাট অভিভাবকহীন এক সড়ক!

1356
কার্তিকপুর সড়কে দুর্ঘটনা, দোহার

দোহার উপজেলার বাঁশতলা থেকে মৈনটঘাট। প্রায় ৮ কি.মি: সড়ক দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কের কার্পেটিং ও ইটের খোয়া সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা। দীর্ঘ কয়েক বছর কোন সংস্কার না হওয়ায় স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, রোগী সহ সাধারণ পথচারীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির এ অবস্থায় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন নজরে না আসায় অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংস্কারের আশ্বাসের নামে কালক্ষেপন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে যায় এ সড়কটি। ফলে দুর্ভোগে পড়ে এ পথে যাতায়াত করা অসংখ্য যানবাহন ও পথচারীরা।

দোহারের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র জয়পাড়া। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার বসে ঢাকা দক্ষিনের সবচেয়ে বড় হাট। প্রতিদিনের কেনাকাটা ছাড়াও সাপ্তাহিক হাটের দিন দোহার, নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ কয়েক জেলা থেকে শত শত ব্যবসায়ীরা এ হাটে আসেন। গাড়ীতে চলাচলকারী যাত্রীরা গর্তে উঠানামা করার সময়ে প্রায়ই আহত হন। গর্তে চাকা আটকে গিয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে অনেক গাড়ীর ইঞ্জিন। আমার বর্তমানে অটোগাড়ী গুলো মাঝে মাঝে উল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে।

কার্তিকপুর সড়ক

বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিক নাসির উদ্দিন বলেন, “নির্বাচনের আগে এসে রাস্তা ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চায় জনগনের কাছে। কিন্তু ভোটে জয়লাভ করার পড় নেতাদের আর কোন খবর থাকে না।”

চরকুশাই স্কুলের শিক্ষিকা তিন্নি আক্তার বলেন, “এই রাস্তায় প্রতিদিন অহররহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝে মাঝে যাত্রীরা উল্টে পড়ে যায়। একদিন আমি নিজেই পড়ে গেছি। সময় মত কোথাও যেতে পারি না। রাস্তা ঠিক করতে আসে কিন্তু দু’এক দিন পর তারা ঠিক না করে চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায় সময়মত হাসপাতালে পৌঁছুতে না পারায় গর্ভবতীদের রাস্তায় সন্তান প্রসব হয়ে যায়।”

অন্য খবর  নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ব্রেক বিহীন যান ‘নসিমন’ পুকুরে

কার্তিকপুরের আলেয়া বেগম বলেন, “রাস্তার কি যে খারাপ অবস্থা কওয়ার মত না। এই হান দিয়া যাওয়ার সময় পেটে ব্যাতা হইয়া যায়।”

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রাস্তার বিভিন্ন স্থানের ঢালাই করা কার্পেটিং, ইট ও সুরকি সরে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও কোথাও দেখা যায় রাস্তায় এক থেকে দের ফিট গর্থের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অবহেলিত মানুষের দাবী একটাই রাস্তাটা খুব দ্রুত সংস্কার করা হোক। বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর দাবীর মুখে কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো সংস্কার ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করে নাই বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কিছুদিন আগে সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হচ্ছে না। রাস্তার এই দশার প্রধান কারন বালু ভর্তি শত শত ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে।

গত বছর সংবাদ প্রকাশের পর ইট, বালু ফেলে কিছুটা মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কের অতি চেনা বেহাল রুপে ফিরে আসে। যা কিনা লোক দেখানো সংস্কার বলেই দাবী মানুষের। এই রাস্তাটি ২০০৫ সালে সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদা ভালো করে কাজ করে। তার পর আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খাঁন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বার বার রাস্তা ঠিক করার ওয়াদা দিলেও কাজ হয় নি এই রাস্তার। বর্তমান সরকারের ২য় মেয়াদে ঢাকা-১ থেকে নির্বাচিত হোন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তাকে এলাকাবাসী ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন শুধু মাত্র দুটি আশায়। তার মধ্যে রাস্তাটির সংস্কার একটি। কিন্তু প্রায় দুই বছর পাড় হলেও কোন ধরনের কাজ না হওয়ার ফলে এই রাস্তায় যাতায়াত করী সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভের।

অন্য খবর  রাত আটটার পর দোকান খোলা রাখায় দোহারে ৫ দোকানিকে জরিমানা

দুই বছর আগে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্রুত সংস্কার করার কথা বলে গেছেন। তার পর দোহার-নবাবগঞ্জের প্রায় সকল সড়ক সংস্কার করা হলেও বাশঁতলা খেতে মৈনটঘাট এই রাস্তায় কাজের কাজ কিছুই হয় নি।

কার্তিকপুর সড়ক

শিলাকোঠার জনি মন্ডল বলেন, “জনগনের কথা বিবেচনা করলে সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা এই রাস্তাটি সংস্কার করত। এত গুরুত্বপূর্ন একটি সড়কের এই বেহালদশা দেখলে খুবই খারাপ লাগে। অনেক প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া আমার এই রাস্তা পাড়ি দিতে চাই না।”

যমুনা বাস চালক জসিম উদ্দিন বলেন, “রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সরকার রাস্তা ঠিক করার কোন পদক্ষেপ নেয়না। তাই আমরা নিজেরা মাটি ফালাইয়া কিছুদিন ভালোভাবে চলাচল করি। কিছুদিন পর আগের মত হয়ে যায়।”

জয়পাড়া কলেজের ছাত্র কাউছার বলেন, “বাশঁতলা থেকে কার্তিকপুর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। এটি দীর্ঘ দিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে অনেক ঝুকি নিয়ে কলেজে যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন এ সড়কের সংস্কার কাজ করছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।”

আপনার মতামত দিন