দোহারে চলছে বাঁধ নিয়ে রাজনীতি

304

নিউজ৩৯ ♦ দোহারে চলছে বাঁধ নিয়ে রাজনীতি। পদ্মা পাড়ের অসহায় মানুষের দুঃখকে পুঁজি করে মাঠে নেমেছে স্থানীয় এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা।  সারা বছর তারা পদ্মা পাড়ের মানুষের কাছে না থাকলেও ফটোসেশনের রাজনীতির কল্যাণে আজ তারাই পরিণত হচ্ছে আইডলে। যদিও দুঃসময়ে তাদের টিকিটিও খুঁজে পায় নি অসহায় মানুষগুলো।

গত আগস্ট থেকে নদী ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্দোলনের ডাক দেয় দোহারের অনলাইনে সরব থাকা তরুণ সমাজ। ধারাবাহিক কর্মসূচির ফলে আজ এই আন্দোলনের ডাক পৌছে গেছে সারা দোহার নবাবগঞ্জে। কিন্তু নদী তীরের কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে ফায়দা তুলতে যাচ্ছে আগামী চেয়ারম্যান নির্বাচনে। বাধেঁর এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তারা নিয়ে আসছে স্থানীয় রাজনীতির দলাদলি। ফলে প্রাণের এই দাবিকে রাজনৈতিক ভাবে তারা দুর্বল করে দিচ্ছে নিজের অজান্তেই।

গত কয়েক মাস আগে নয়াবাড়ি ইউনিয়ন ও কুসুমহাটি ইউনিয়নে নদী ভাঙন নিয়ে ঢাকায় ও বাহ্রা ঘাটে মানববন্ধন হলেও সেখানে দাওয়াত দেয়া হয় নি নয়াবাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ হান্নান ও কুসুমহাটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব দোহারিকে। শুধু রাজনৈতিক ও স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে ডাকা হয় নি। এমনকি তারা যেন সেখানে উপস্থিত না থাকে তার সকল ব্যবস্থা উদ্যোগতারা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নয়াবাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান। এছাড়া ভাঙ্গন আক্রান্ত নারিশা ইউনিয়নের কাউকেও জানানো হয় নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। 

অন্য খবর  ঢাকা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪ নাম্বার ওয়ার্ডে ওয়াহিদুজ্জামান রনি লটারিতে জয়ী

এ ব্যাপারে নয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান নিউজ৩৯-কে বলেন, “কাউকে সারা বছর পদ্মা দুর্গতদের পাশে দেখা না গেলেও মৌসুমী এই সব রাজনীতিবিদদের ক্যামারার সামনে ঠিকই দেখা যায়। তারা আসেন ফটোশ্যুটের রাজনীতি করতে। কিন্তু বাঁধের জন্য সচিবালয়ে কাউকে দেখা যায় না। দেখা যায় না ত্রাণ নিয়ে পাশে দাঁড়াতে। একমাত্র দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের তরুণেরা নিঃস্বার্থভাবে বাঁধের দাবীতে আন্দোলন করে যাচ্ছে।” 

তার কথার সত্যতা মিলে ঈদের পর বাহ্রা ঘাটে হয়ে যাওয়া মানব বন্ধনে। ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে বাহ্রা ঘাটে বাঁশের অস্থায়ী বাঁধ দেয়া হলে ছবি তুলে সেটা সাধারন জনগনের তৈরি বলে চালিয়ে দিয়েছেন এই সব রাজনৈতিক নেতারা। 

দোহারের প্রাণের দাবি বাঁধ নিয়ে রাজনীতি দেখে হতাশ পদ্মা পাড়ের সাধারণ মানুষ। তারা বাঁধের ব্যাপারে অচিরেই এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করে সাধারণ মানুষের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ডাক দেন। 

দোহার নাগরিক ফোরাম, ওরা ২১ জন, দোহার নবাবগঞ্জ মানিকগঞ্জ নদী ভাঙন রক্ষা কমিটি নামে বিভিন্ন সংগঠন ২-১ টি মানববন্ধন করলেও ধারাবাহিক কোন আন্দোলনে দেখা যায় নি, দেখা যায় নি জনগণকে সম্পৃক্ত করে কিছু করতে। তাই স্থানীয়ভাবে অনেকেরই ধারণা এই আন্দোলন শুধু লোক দেখানো। আবার এতে কাউকে কাউকে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। 

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে ১৫ জনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার

দোহার নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্টের বাঁধ বাস্তবায়ন প্রোগ্রামের আহবায়ক  তারেক রাজীব নিউজ৩৯-কে বলেন, “কে কি করলো আমরা তা ভাবি না। আমাদের করতে হবে এটাই বাস্তবতা। দোহারকে বাঁচাতে আমাদের দরকার বাধঁ সহ স্থায়ী সমাধান। আর বাঁধ দিতে পারবে একমাত্র সরকার। তাই সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও ঘুমন্ত প্রসাশনকে জাগাতে আমাদের এই আন্দোলন। এখানে প্রতিটি কর্মসূচিতে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ সবাই সর্বোতভাবে আমাদেরকে দল-মত নির্বিশেষে দোহারবাসী হিসাবে সহযোগিতা করেছে, পাশে থেকেছে, মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধন করেছে। আজ দোহারের তরুণরা জেগে উঠেছে। সকল ভালোর পাশে আছে তারা। আমরা আশা করি ঢাকা-১ সংসদীয় আসন হিসাবে সরকার অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন । আমরা দাবি আদায়ে সবাইকে এক হয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।”

জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “বাঁধ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এখানে চেহারা দেখানোর কিছু নেই। সবাইকে এই ভালো কাজে এক হতে হবে। দোহার নবাবগঞ্জের তরুণ সমাজ যে উদ্যোগ নিয়েছে সে ব্যাপারে আমরা সবাই এক হতে পারি। এই তরুণেরা সবাইকে নিয়ে বাঁধ নির্মাণে এগিয়ে যাবে বলে আশা রাখি। আর কেউ যদি রাজনীতি করতে চান তবে তার দলীয় ব্যানারে করুণ। কিন্তু ভালো কোন উদ্যোগকে নষ্ট করবেন  না বলে আশা করি।”

আপনার মতামত দিন