বহু প্রতিক্ষীত বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর হয় দোহারে না হয় সিরাজদিখানে । প্রকল্পটি পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতাধীনে বাস্তবায়িত হবে। এতে খরচ হবে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পটিতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। একই স্থান থেকে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। ঢাকার বাইরে বিমানবন্দরের অবস্থান হলেও যাত্রাপথ হবে স্বল্পসময়ের। এ জন্য থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।এইসব ও দূরত্ব বিবেচনায় রেখে ঢাকার পাশে দোহারের চর বিলাশপুরে আর না হলে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকাই হতে পারে বিশ্বমানের বিমানবন্দরটি। যদিও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৪ স্থানের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিগগির জাপান যাচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল।
এদিকে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জাপানের প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে শিগগির। নির্দিষ্ট ৪ স্থানের ওপর চলবে সম্ভাব্যতা যাচাই। সেগুলো হচ্ছেÑ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ও লতব্দি এবং ঢাকার দোহারের চরবিলাসপুর। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জকেই অগ্রাধিকার দিতে চায় সরকার। কেননা এর আগে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে সংঘর্ষের ঘটনায় গত মহাজোট আমলে থেমে যায় বিমানবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম।তবে স্থান ও নদীর ভৌগলিক অবস্থা এবং পদ্মা ব্রীজের কেনেকটিভিটির কথা বিবেচনায় রেখে দোহারেই হতে পারে আন্তর্জাতিক মানের এই বিমান বন্দর। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এ প্রসঙ্গে বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডির পর বিমানবন্দরের স্থান চূড়ান্ত হবে। দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিমানবন্দর নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগে ফিজিবিলিটি স্টাডির অংশ হিসেবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্য থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পাওয়া যায়। বুয়েটের সহায়তায় প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি ২টি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত করে। এরও পর সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেডকে নির্বাচিত করা হয়। ১২০ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার ৩৪ টাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ প্রদান এবং চুক্তি সম্পাদনের জন্য সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জাইকার অর্থায়নকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর আগে পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের চিন্তা ছিল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্পের একটি কাজে আগামী আগস্টে জাপান সফরের কথা রয়েছে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের। বিমানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সফরকালে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়টি সেখানে তুলে ধরার কথা রয়েছে। অত্যাধুনিক এ বিমানবন্দর নির্মাণে ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার মনে করছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আপগ্রেডেশন হলেও বিদ্যমান চাহিদা পূরণ করতে পারবে বড়জোর ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রী ও কার্গো পরিবহনের চাহিদার কারণে ১৪ হাজার ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩টি রানওয়েবিশিষ্ট বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ড্রইং-ডিজাইন চূড়ান্ত হলে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারিত হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। প্রায় ৮ হাজার একর জমির ওপর হবে এ বিমানবন্দর।
গত মহাজোট সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিল। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আড়িয়ল বিল এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে প্রকল্পটি গতি হারায়। বর্তমানে আবার বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়। প্রথমবার প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এবার সম্ভাব্যতা যাচাইকালে গুরুত্ব দেওয়া হবে বিমানবন্দরের জন্য উপযুক্ততার বিষয়টি। যোগাযোগব্যবস্থা, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব ইত্যাদি প্যারামিটার বিবেচনায় আনতে নির্দেশ দিয়েছে বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ অবকাঠামো বিবেচনায় নিয়ে পদ্মার এ পাড়েই বিমানবন্দর নির্মাণের ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।