প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। কারণ পৃথিবীর অনেক দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের বৈধতা নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ শীর্ষক এক সেমিনারের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নূরুল হুদা বলেন, ‘প্রবাসীরা বর্তমানে প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ভোটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন। আগামী নির্বাচনের আগে এসব পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হবে।’
সিইসি বলেন, বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি নাগরিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি রয়েছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে সীমিত আকারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেন। ওই পরীক্ষার আলোকে সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
মূল প্রবন্ধে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসে ভোট গ্রহণের সুবিধা-অসুবিধার বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রবাসে ভোট গ্রহণের বিষয় বিবেচনা করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রতিটি দূতাবাসে একটি লোকাল সার্ভার স্থাপন, প্রবাসীদের সংখ্যানুপাতে রেজিস্ট্রেশন টিম তৈরি করে কাজ এগিয়ে নেয়া এবং নিবন্ধন কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও দক্ষ আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসে ভোটগ্রহণে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সহিংসতা ঠেকানো, পোস্টাল ব্যালটের স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা’। তিনি বিদেশেই প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, প্রাথমিকভাবে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আইনি কাঠামো তৈরি করার সুপারিশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত বিশ্বে অবস্থান করছেন, তাদের একটি বড় অংশ সে দেশেরও নাগরিকত্ব নিয়েছেন। আবার তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বও বাদ দেননি।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার অধিকার, তাদের কীভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায় সেটা আলোচনা করা দরকার। পোস্টাল ভোট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু কার্যকর হবে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে কে ভোট দিয়েছেন তা শনাক্তকরণ দুরূহ বিষয়।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার) নাহিদা রহমান সুমনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ইয়েমেন আকবরী, ইতালীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান শিকদার, সৌদিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শফিকুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ অংশ নেন।
সেমিনারে বিশিষ্টজনরা প্রবাসে বাংলাদেশীদের ভোটের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলেও ভোটার করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত জাতীয় পরিচয়পত্র দ্রুত দেয়ার সুপারিশ করেন। সেক্ষেত্রে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) যাদের রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন।