ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা একটি কৃষিনির্ভর এলাকা। ১৪টি ইউনিয়নের ৪২টি কৃষি ব্লক নিয়ে উপজেলার কৃষি এলাকা গঠিত। উপজেলার এক সফল কৃষাণীর নাম মায়া রানী বাউল। তার সফলতা এখন অনেক কৃষককেই কৃষিকাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে।
উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বাহ্রা ইউনিয়নের কান্দামাত্রা গ্রামের জগদীশচন্দ্র বাউলের স্ত্রী মায়া রানী বাউল। মধ্যবিত্ত সংসারে সচ্ছলতা আনার উদ্দেশ্যে নিজেকে কৃষিকাজে নিয়োজিত রেখেছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। কৃষিকাজ করে ১৫টি বিদেশি গাভী কিনে বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি ডেইরি ফার্ম, যা থেকে তার বর্তমান মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
প্রতিবছরের মতো এবারও মায়া রানী বাউল প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বেগুন, শিম, পেঁপে, টমেটো, আলুসহ বিভিন্ন সবজির উত্পাদন করেছেন, যা থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। ৪ বিঘা জমিতে বুনেছেন সরিষা। তাকে কৃষিকাজে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়ালীউল্লাহ ও তার স্বামী ডা. জগদীশচন্দ্র বাউল।
শুধু জমিতে বেগুন, শিম, পেঁপে চাষ করেই থেমে থাকেননি মায়া রানী। এসবের পাশাপাশি নিজের বাড়িতে তিনি রোপণ করেছেন ফলদ ও ঔষধি গাছ। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পরোপকারী বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
মায়া রানী জানান, আমার স্বামীর সংসারে অভাব ছিল না। মধ্যবিত্ত সংসারে একটু সচ্ছলতা আনার জন্য আমি সবসময় চেয়েছি নিজে কিছু করতে। যেহেতু আমাদের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই, তাই বাড়িতেই কিছু করার চিন্তা করেছিলাম। এক সময় আমার স্বামী আমাকে বাড়িতে ও বাড়ির পার্শ্ববর্তী জমিতে সবজি চাষের কথা বলেন। আমি কোনো কিছু চিন্তা না করে প্রথমে অল্প জমিতে বেগুন ও শিমের চাষ করলাম। প্রথম বছর ভালো লাভ হওয়ায় আমি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে এখন আমি বেগুন ও শিমের পাশাপাশি অন্য
সবজিও চাষ করছি। এখন আমি সবজি চাষের পাশাপাশি ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছি। এতে আমার পরিবারে আরও সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
উপজেলা কৃষক সংগঠক শেখ আবুল হোসেন জানান, মায়া রানী বাউলের সাফল্য দেখে উপজেলার অনেক মহিলা এখন কৃষিকাজে এগিয়ে আসছেন। তার উত্পাদিত বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি নবাবগঞ্জের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শহীদুল আমীন জানান, কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জরুরি। আমি উপজেলার অন্য নারীদেরও বলব, আপনারাও মায়া রানীর মতো এগিয়ে আসুন, সাফল্য আসবেই।