নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না

560
নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না

প্রায় এক মাস ধরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর ভাঙ্গাভিটা এলাকায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও কিছুতেই তা বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নীরব ভূমিকায়। অন্যদিকে থানা পুলিশ প্রভাবশালীদের ক্ষমতার কাছে নিরূপায় হয়ে পড়েছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালু লুণ্ঠন করছে প্রভাবশালী চক্রটি। এতে পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ি ও শত শত একর আবাদি কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা মুরাদ মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক মাস ধরে অবাধে বালু উত্তোলন করে চলেছে। শত শত বিঘা কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে ওই চক্রটি। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ি ও শত শত একর আবাদি কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়েছে। চক্রটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই এলাকার জমির মালিকরা। ভাঙ্গাভিটা এলাকায় দুটি ড্রেজার বসিয়ে এক মাস ধরে দিন-রাত অবাধে বালু উত্তোলন করে চলেছে ওই বালুদস্যুরা।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জ - দোহারে লাইসেন্সবিহীন চলছে ট্রাক-পিকআপঃ দরকার প্রশাসনের অভিযান

সরেজমিন দেখা গেছে, বালু উত্তোলনের হিসাব মোতাবেক প্রতিদিন ৪০-৪২টি বাল্কহেডের বালু লোড দিচ্ছে। এর মধ্যে থেকে প্রতিদিন একটি বাল্কহেড বালু ইউনিভার্সিটির জন্য বরাদ্দ, বাকি ৪০-৪১টি বাল্কহেড বালু অন্যত্র বিক্রি করছে বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভাঙ্গাভিটা গ্রামের কৃষক পরিতোষ বাবু জানান, আমাদের এলাকায় কোনোকালেও বালুমহাল ছিল না। মুরাদ মিয়া ফসলি জমির ধারে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের লোহার পাইপ দিয়ে ১২০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করতে পারে, এমন দুটি বড় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সিফাত ও হাজী সামাদ নামে দুটি বালু কাটার মেশিন প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেডের বালু লোড দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা পবিত্র কুমার জানান, এভাবে দিন-রাত বালু উত্তোলন চলতে থাকলে ফসলি জমি ও আশপাশের বাড়িঘর দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই চক্রের ক্ষমতা আর টাকার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ভাঙ্গাভিটা গ্রামের বাসিন্দা গণেশ জানান, আমাদের গ্রামের ৯৮ ভাগ অধিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়। প্রভাবশালী চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। কারও জমি কেটে নিয়ে গেলেও কিছু করার থাকে না। কেউ বাধা দিতে গেলে তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে পুত্র হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন 'খুনীদের আটক করুন, নাহলে আমারে করুন'

নবাবগঞ্জের বাসিন্দা, সাবেক গণপরিষদ সদস্য আবু মো. সুবিদ আলী টিপু জানান, শত শত একর জমি কেটে লুটপাটের মহোত্সব চলছে। দেখার কেউ নেই। বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে কৃষিজমি লোপাট হচ্ছে।

বালু উত্তোলনের মূল হোতা মুরাদ মিয়া বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমোদন নিয়ে বালু কাটছি। এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় চলতি দায়িত্বে থাকা দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আল-আমিন জানান, আমার জানা মতে নবাবগঞ্জ উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয় কোনো অনুমতি প্রদান করার কথা নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত দিন