নবাবগঞ্জ’র লাকী আবারো শিল্পকলা’র মহাপরিচালক
চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। দায়িত্ব পেয়ে উচ্চাসিত লাকী বলেন, ‘জেলায় জেলায় শিল্পকলা একাডেমির কাজকে আমরা বেগবান করতে চাই। সেইসঙ্গে আমরা প্রবেশ করতে চাই উপজেলা পর্যায়েও। তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
অভিন্ন্দন ও শুভ কামনা ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম ও নবাবগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গণে অনন্য এই ব্যালক্তির গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা টিকরপুর গ্রামে। তার বাবা শেখ সাদেক আলী এবং মা মাজেদা আলী। লিয়াকত আলী লাকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ডিপ্লোমা অর্জন করেন গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাশাপাশি জাপান দূতাবাস থেকে এক বছরের জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করেন। সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগী লিয়াকত আলী লাকী বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীতে ৫ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। পরে বিভিন্ন সময় একাধারে নতুন নতুন সুর সৃষ্টি, সংগীত রচনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবার হৃদয়ে।
১৯৬৪ সালে নিজ গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে নাটক করতে শুরু করেছেন। শিশুকাল থেকে নাটকের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটে নিজেদের পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরে স্কুলের সহপাঠী ও অন্যান্য স্থানীয় বন্ধু-বান্ধবকে একত্রিত করে দল করে কিশোর লাকী গ্রামে ঈদ-পার্বণসহ বিভিন্ন উৎসবে নাটকের নির্দেশনা দেন ও অভিনয় করেন। এভাবে গড়ে তোলেন নিজস্ব নাট্যদল ‘বাসন্তী নাট্য সংঘ’। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত প্রায় ২৫টি নাটকে অভিনয় করেছেন এবং ২৩টি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। শৈশবে নাটক তৈরিতে কাহিনী সংগ্রহ করতেন নিজেদের পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন গল্প-কবিতা থেকে।
১৯৮১ সালের ৬ জুলাই একদল শিক্ষিত তরুণ নিয়ে নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। আজ অবধি তিনি লোক নাট্যদলের অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বাংলাদেশের নাটককে আন্তর্জাতিক আসরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, নাটকের মাধ্যমে শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি করা, দেশে প্রথমবারের মতো একটি নাট্যতথ্য ব্যাংক স্থাপনসহ ৬টি কর্মসূচিকে সমন্বয় করতে ১৯৯০ সালে পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন।
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে লিয়াকত আলী লাকীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি ১৯৮৪ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত গান্ধী শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের যুব সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে মোনাকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব, ওয়ার্কশপ এবং ২১তম আন্তর্জাতিক থিয়েটার কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে মোনাকোতে অনুষ্ঠিত ২৩তম আন্তর্জাতিক থিয়েটার কংগ্রেসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বসহ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে কানাডার রাজধানী মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত আইএটিএর আর্টিস্টিক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোরিয়ার চুনচুন সিটি ও জাপানের তইয়ামায় আন্তর্জাতিক সেমিনার ও নাট্যোৎসবে যোগদান করেন। ২০০০ সালে জার্মানিতে এক্সপো হ্যানোভার ২০০০-এর কালচারাল ফেস্টিভালে এবং বার্লিনের ডাহলেম মিউজিয়াম অডিটরিয়ামে তার নির্দেশিত ‘তাসের দেশ’ ও ‘বাজাও বিশ্ববীণা’ বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়। একই বছর জাপানের তইয়ামায় অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু নাট্যোৎসব ‘রূপ বদলের রূপকথা’ ও ‘বাজাও বিশ্ববীণা’ বিপুল প্রশংসা অর্জন করে। ২০০১ সালে তুরস্কের ডেনিজলিতে অনুষ্ঠিত ১৭তম আন্তর্জাতিক অ্যামেচার থিয়েটার উৎসবে ‘রথযাত্রা’ বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়।
তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে সহসভাপতি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ কেন্দ্রের প্রধান লিয়াকত আলী লাকী এশিয়ান রিজিওনাল কমিটির সহসভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্পাদক। লিয়াকত আলী লাকী ২০০২ সালে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন।