শরীফ হাসান দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার দোহার উপজেলায় বর্তমানে তিন ধরনের ভিক্ষুক দেখা যায়। এরমধ্যে রয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দোহারে আসা অতিথি ভিক্ষুক। যারা বিশেষ দিবস বা দিনকে টার্গেট করে ভিক্ষার কাজে নামে। এরপর ফিরে যায় নিজ এলাকায় ও পুরোনো পেশায়।
এই রমজানে বিভিন্ন গণপরিবহন, অফিসপাড়া, বিভিন্ন মসজিদের সামনে ও বাসা বাড়িতে সুস্থ শরীরের নানা বয়সী নারী-পুরুষ ভিক্ষাবৃত্তি করেন। এদের অনেকেই সুস্থ স্বাভাবিক হলেও বিভিন্ন বাহানা দিয়ে ভিক্ষা করেন তারা। এরা মূলত দোহারের পেশাজীবী ভিক্ষুক। এছাড়াও সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র কর্মহীন ও অসুস্থ অনেকেই সহায়তা চেয়ে ভিক্ষা করে থাকেন। সারাদিন ভিক্ষার অর্থ ও উত্তোলিত খাদ্যসামগ্রী দিয়েই চলে তাদের জীবন জীবিকা।
দোহারের স্থায়ী ভিক্ষুকদের কাছ থেকে জানা গেছে, রমজান এবং ঈদে পাড়া মহল্লা ও মসজিদের সামনে অনেক অপরিচিত ভিক্ষুকের আনাগোনা বাড়ে।
জয়পাড়া ব্রিজ এর উপরে থাকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আল আমিন বলেন, ‘রোজার ঈদ আইলেই গ্রামেত্তন কতডি মানুষ দোহারে আইয়া পরে ভিক্ষা করতো। তাগো লাইগা আমরা এই মাসে তেমন ভিক্ষা পাই না। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করি এইসব ভুয়া ভিক্ষুকদের যেন জেলে দেয়। আমরেয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, লেংরা লুলা, প্রতিবন্ধী ভিক্ষা আমাগো অধিকার। আর ওরা (অতিথি ভিক্ষুক) সুস্থ হইয়াও এক মাসের লাইগা আহে ভিক্ষা করতে।’
সরেজমিনে জানা যায়, রমজান মাস এলেই দোহারের বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষুকের উপদ্রব বাড়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ভিক্ষা করে। অনেকে আবার এই কাজের সহায়তায় শিশুদের ব্যবহার করেন। বিশেষ করে বেদেরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে দোহারে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে অতিথি ভিক্ষুকের আধিক্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। রোজার শুরু থেকে অতিথি ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়তে থাকে বলে জানান তারা। এছাড়াও হিজলা ও বেদেরও এই রমজান মাসে টাকার জন্য নেমে যায়। টাকা না দিলে তারা ছাড়ের না।
এবিষয়ে দোহারের ইউসুফপুর এলাকায় মো: রাকিব জানান, আমি রোজার মধ্যে কাজে বাজারে এসেছি। তখন বেদেরা আমাকে জোর করে ধরেছে টাকার জন্য। আমি তাদেরকে না করেছি বলে তারা আমাকে অনেক অভিশাপ দেয়। তাই আমি মনে করি এটা ভিক্ষা নয় চাঁদাবাজী। সরেজমিনে বেশকিছু ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে দোহারের বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক ভিক্ষুক দোহারে এসেছে। এদের মধ্যে পেশাজীবী ভিক্ষুক ও অতিথি ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। টাকার লোভে এরা বিভিন্ন এলাকা থেকে দোহারে ঈদকে সামনে রেখে ভিক্ষা করতে এসেছে। আবার অনেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আত্মীয় স্বজন নিয়ে দোহারে এসে এক মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে, মসজিদের সামনে, ব্যাংকপাড়া ও অভিজাত এলাকায় ভিক্ষার কাজে নেমে পড়ছে।
এ বিষয়ে দোহারের জয়পাড়া এলাকায় নিয়মিত ভিক্ষা করা ইসমেত আরা (৫৪)বলেন, দেশের নানান জায়াগা থেকে ভিক্ষা করতে বহু লোক দোহারে আসে। বরিশাল, ভোলা, ময়মনসিংহ,ফরিদপুর এসব এলাকা থেকে বেশি আসে। স্বামী ঢাকায় রিকশা চালায় গ্রাম থেকে রমজানের সময় স্ত্রীরে নিয়ে আসে ভিক্ষা করাতে। এদের ব্যবসাই এটা। নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বাসায় থাকে তারা। আবার ভিক্ষা করতে একসাথে আসা কয়েকজন মিলেও ঘর ভাড়া নেয় এক মাসের জন্য।
মৌসুমি ভিক্ষুকদের কারণে প্রকৃত অসহায়রা বঞ্চিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দোহারে কাজ করা মানুষ আমরা। এখন আর ভারী কাজ করতে পারি না তাই মানুষের কাছে দুই-চার টাকা সাহায্য নিয়া চলি। আসি পরিচিত মানুষজন যদি কিছু দেয়, জোর নাই। কিন্তু যারা রমজানের এক মাসের জন্য আসে তারা সারাটা দিন ঘোরে, ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবে, বেশিরভাগই রোজা রাখে না। তারা সামনে পেলে পথাচারীকে ভিক্ষার জন্য বিরক্ত করে। তখন আমরা সামনে গেলে আর কেউ ভিক্ষা দিতে চায় না। ফিরায়া দেয়।’
তিনি আরো বলেন, রমজানে মৌসুমি ভিখারিরা দৈনিক ১০০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে।