জাকির হোসেন,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,নিউজ৩৯, ঢাকাঃ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠেয় সম্মেলন ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর ও দক্ষিণে পদ প্রত্যাশীরা। আজ ১১ ও ১২ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও খামারবাড়ির কৃষিবিদ মিলনায়তনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে কপাল খুলতে পারে, আমলনামার প্রেক্ষিতে ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ত্যাগী যোগ্য দোহার নবাবগঞ্জের ২ কৃতি সন্তান সাগর আহমেদ শাহীন ও ফরিদুর রহমান ইরানের। তারাই এবার ঠাঁই পেতে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটির শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ পদে। ক্ষমতাসীন সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহানগরীর দুই কমিটির শীর্ষ পদে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা ঠাঁই পাবেন।
‘আপনি তো এবারও শীর্ষ পদের জন্য আগ্রহী’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের আলোচনায় অনেকে থাকলেও শীর্ষ পদের লড়াই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, ‘আমি দীর্ঘ কয়েক বছর সেক্রেটারি ছিলাম, সভাপতি তো আশা করবই। বাট তারপরও আমাদের কোনো সে নেই। আমাদের হাইকমান্ড হলো জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাহাউদ্দিন নাছিম ভাই। তাই মাননীয় নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এবং বাহাউদ্দিন নাছিম ভাই যেখানেই দেবেন, সেখানেই কাজ করব।’
বাংলাদেশ কাজী সমতির সাধারপণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শাহীন বলেন, দলের জন্য আমি সকল ত্যাগ স্বীকার করেছি। দলের জন্য গুলি খেয়েছি। এখনো সে যন্ত্রণা দেহে বয়ে চলেছি। আমরা চাই, সংগঠনে যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, ত্যাগী ও দুর্দিন দুঃসময়ে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন, এক/এগারের নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাদের খুঁজে বের করে নেতা নির্বাচিত করা হোক।’
সূত্র আরও জানায়,তবে মহানগর শাখার শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে নতুন মুখ আসবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে খুলে যেতে পারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ত্যাগী সাবেক ছাত্রনেতাদের কপাল। ইতোমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে থেকে নানা কারণে বির্তকিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন, তাদের আমলনামা এরইমধ্যে বিভিন্ন এজেন্সি মারফত দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছেছে।
দায়িত্বশীল দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ঢাকা মহানগরীজুড়ে পদপ্রত্যাশী নেতারা পোস্টার, ফেস্টুনে প্রার্থিতা জানান দিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। ১১ নভেম্বর সকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহানগর দক্ষিণের এবং ১২ নভেম্বর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহানগর উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল। সম্প্রতি ক্যাসিনোকান্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
অন্যদিকে আগামী ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। তার আগে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হবে। এবার নানা অপকর্মে ভাবমূর্তির সংকটে পড়া সংগঠনকে সঠিক ধারায় ফেরাতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির আমলনামা’ই নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন খোদ পদপ্রত্যাশী নেতারাই। এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতেই এবার সংগঠনের দুই গুরুত্বপূর্ণ শাখার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিভিন্ন নেতাদের আমলনামা সংগ্রহ করে রেখেছেন।
সংগঠনের নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। যারা দলের ত্যাগী পরীক্ষিত, দুঃসময়ে দলের সঙ্গে ছিল দলের দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যারা বিভিন্ন অবদান রেখেছে, তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসবে, এটা আমরা চাই।”