মাহবুবুর রহমানকে সংবর্ধনা; অতিথিদের বিরুদ্ধে পোস্টার; মেরুকরণের দিকে দোহার আওয়ামীলীগ

499
মাহবুবুর রহমানকে সংবর্ধনা; অতিথিদের বিরুদ্ধে পোস্টার; মেরুকরণের দিকে দোহার আওয়ামীলীগ

নিউজ৩৯, রাজনৈতিক প্রতিবেদক: ঢাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারনণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের ছাত্র সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জয়পাড়া কলেজ ক্যাম্পাস। মূলত সালমান এফ রহমান ও আইজিআর কে এম আব্দুল মান্নানকে অতিথি করায় সংক্ষুব্ধ হয়ে জয়পাড়া কলেজের রাজনৈতিক একটি পক্ষ এই পোস্টার লাগিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সাথে এই ছাত্র সংবর্ধনায় সাবেক গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মান্নান খানকে অতিথি না করাটাকেও অগ্রহণযোগ্য মনে করছে সেই পক্ষটি। ফলে রাজনৈতিক ভাবে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে জয়পাড়া কলেজ ক্যাম্পাস। এতে সুস্পষ্ট মেরুকরণ হয়ে পড়ছে দোহার উপজেলা আওয়ামীলীগ।

এরই মাঝে ১৪ই জানুয়ারি জয়পাড়া কলেজ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন ও জয়পাড়া কলেজ ছাত্রলীগের ছাত্রসংবর্ধনা সফল করার জন্য প্রাক-প্রস্তুতি মিছিলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা। যদিও কোন পক্ষই এটাকে পাল্টাপাল্টি প্রোগ্রাম বলছে না।

অতিথির তালিকায় মান্নান খানের নাম থাকা না থাকা কে কেন্দ্র করে দোহারের রাজনীতিতে একটা চোরা স্রোত কয়েকদিন ধরেই বয়ে আসছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে সেটা পরিস্কার হয় কলেজ জুড়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীর নামে একটি পোস্টার সাটানোকে কেন্দ্র করে।

মাহবুবুর রহমানকে সংবর্ধনা; অতিথিদের বিরুদ্ধে পোস্টার; মেরুকরণের দিকে দোহার আওয়ামীলীগ

জয়পাড়া কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রী নামে তৈরি করা এই পোস্টারে বলা হয়েছে, সংবর্ধনার অতিথিদের প্রতিরোধ করা হবে, কারণ তারা জয়পাড়া কলেজ সরকারীকরণের ব্যাপারে বাধা দিয়েছে এবং অতিথিদেরকে মীর জাফর উল্লেখ করে পোস্টারে বলা হয়েছে, মীর জাফরদের পতন হবে, জয়পাড়া কলেজ সরকারি হবে।

একই সাথে জয়পাড়া কলেজে তাদের যারা অতিথি করে এনেছে তাদেরকে ধিক্কার জানানো হয়।

এই দিকে জয়পাড়া কলেজকে সরকারীকরণের অগ্রগতি নিয়ে ১৪ জানুয়ারী রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আহবান করেছেন জয়পাড়া কলেজকে সরকারীকরণের দাবিতে রিটকারী জয়পাড়া কলেজের সাবেক ভিপি ও দোহার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি  আলমাস উদ্দিন ও সাবেক জিএস এবং দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আকন্দ।

অন্য খবর  দিনের বেলায়ও জ্বলছে পৌরসভার বাতি

আব্দুর রহমান আকন্দ নিউজ৩৯-কে ১৪ই জানুয়ারির প্রোগ্রামে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, রবিবার সরকারীকরণ বিষয়ে রিট মামলার অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হবে।

কিন্তু একই সাথে একই সময়ে একইদিন “ছাত্র সংবর্ধনা”কে কেন্দ্র করে সংবর্ধনা সফল করার জন্য জয়পাড়া কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক প্রস্তুতি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। একই সময় দুইটি অনুষ্ঠান কি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কিনা এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় জয়পাড়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আওলাদ হোসেন রিয়াদকে।

আওলাদ হোসেন রিয়াদ নিউজ৩৯কে বলেন, এখন অনেকেই জয়পাড়া কলেজ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারী করণের দিকে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে তখন অনেকেই এটাতে গাত্রদাহ হয়ে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু করছে বা বলছে; যা একই সাথে জয়পাড়া কলেজের সরকারীকরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের এটা ২য় টার্ম, ১ম টার্মে এই ঢাকা-১ আসন থেকে মন্ত্রী হয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুল মান্নান খান। তখন তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক। এক সময় বাম রাজনীতি করার সুবাধে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে তার ছিল খুবই ভাল সম্পর্ক, তাকে বললেই স্পেশাল পাওয়ারে জয়পাড়া কলেজকে তখন সরকারি করা যেতো। এমনকি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত যখন দোহার ঘুরে গেছেন তখনও দাবি জানানো যেত জয়পাড়া কলেজকে সরকারী করার জন্য। কিন্তু করা হয় নি। অথচ এখন যারা গলা ফাটাচ্ছে, তারা তো মন্ত্রীর আশেপাশেই ছিল, তারাই মন্ত্রীকে কখনও এই কাজ করতে চাপ দেয়নি বা অনুরোধ জানায়নি। কেন?”

অন্য খবর  দোহারে মাদ্রাসা ছাত্রদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পাল্টা প্রোগ্রাম সংবর্ধনা প্রস্তুতি মিছিল কিনা এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, আওলাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাজীব শরীফ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, আমি আওলাদ হোসেন রিয়াদ যুগ্ম আহবায়ক, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন শান্ত যুগ্ম আহবায়ক, কই আমরা তো জানি না সংবাদ সম্মেলনের কথা। আব্দুর রহমান ভাই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত স্থান থেকে। এইখানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের কোন সম্পর্ক নেই। উনারা রিটকারী। উনারা বর্তমান পরিস্থিতি জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন করতেই পারেন, এটার সাথে ছাত্রসংবর্ধনার  কোন সম্পর্ক নেই।

এই ব্যাপারে আই জি আর ড. খান মো: আব্দুল মান্নান নিউজ৩৯ কে বলেন, “যারা প্রতিহত করতে চেয়েছে করুক। এই ব্যাপারে কিছু বলবো না। তবে আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি, দোহারের সন্তান হিসাবে জয়পাড়া কলেজ সরকারি করণেও আমরা কাজ করতে চাই। এটা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাপস কুমার নন্দী ভালোভাবেই জানেন।”

অতিথিদের প্রতিহত করার পোস্টার নিয়ে নিউজ৩৯ কথা বলে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সাথে। আলমগীর হোসেন বলেন, “দোহারে সালমান এফ রহমানকে প্রতিহত করার মতো কেউ নেই। যারা এখন রাজনৈতিক পরিমন্ডলে গুরুত্ব হারিয়ে, হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে, এটা তাদের এক ধরনের বালখিল্ল্যতা। কোন কিছুই ছাত্র সংবর্ধনায় বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না।”

উল্লেখ্য এদিন প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদ্বেষ্টা সালমান এফ রহমান জয়পাড়া কলেজ সরকারীকরণ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন