খুন যেখানেই হোক, লাশ মিলছে সিরাজগঞ্জে|

    115
    দোহারে পদ্মা থেকে অজ্ঞাত তরুনীর লাশ উদ্ধার

    দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের পর লাশ এনে ফেলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন নদী, খাল ও নির্জন স্থানে। সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে দু’টি জোড়াখুনসহ বেশ ক’টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব খুনের রহস্য উদ্ধার হয়নি। পুলিশও গ্রেফতার করতে পারেনি দায়ীদের। এসব ক্ষেত্রে লাশ ‘অন্য জায়গা থেকে ভেসে এসেছে’ বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা না করে লাশ উদ্ধারের আগে জিডি করেই দায় সারার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

    গত বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে জেলার উল্লাপাড়ার ঘাটিনা ব্রিজ ও ঘাটিনা পালপাড়া এলাকায় ফুলজোড় নদী থেকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া ও চারঘাট উপজেলার দুই জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া দুই জনেরই মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন ছিল। খুন করার পর তাদের দু’জনের লাশই ফুলজোড় নদীতে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জিডি এন্ট্রি করে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরে স্বজনরা তাদের লাশ শনাক্ত করেন। নিহতরা হলেন, রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার দরিখরবনা গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ইসরাফিল (১৮) ও একই জেলার চারঘাট থানার বরকতপুর গ্রামের ইনসাফ আলীর ছেলে রাসেল (৩০)।

    গত ১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়ী চেকপোস্ট এলাকায় আলিফ-আদিল পরিবহন নামে উত্তরবঙ্গের একটি ভুট্টা বোঝাই ট্রাকের কেবিন থেকে ট্রাকচালক ও হেলপারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন—রংপুর জেলার বাসিন্দা আল-আমিন (৪০) ও লালমানিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা সোহেল (৩৫)। মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভুট্টা বোঝাই ট্রাকটির ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশ কেবিনের ভেতর থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানায় মামলা হলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত করছে। কিন্তু গত একমাসেও খুনের রহস্য উদঘাটন বা অপরাধীদের ধরতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাটি।

    অন্য খবর  শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিত হলেই দেশ এগিয়ে যাবে অ্যাডঃ সালমা ইসলাম

    এছাড়া, গত ১ নভেম্বর জেলার রায়গঞ্জের পাঙ্গাসি ইউনিয়নের বেঙনাই তেঘুরি গ্রামে পুকুরের চালা থেকে ফজলার রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরআগে গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হামকুড়িয়া এলাকার নয় নম্বর ব্রিজের নিচে নদী থেকে তার ভাসমান এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মাথার পেছনের দিকে ও ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর তাড়াশের বারুহাস ইউনিয়নের সাচানদিঘির চর থেকে ভুট্টো শেখ (৪৬) নামে এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

    এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কৌশিক আহম্মেদ বলেন, ‘উল্লাপাড়ার ঘাটিনা ব্রিজ ও ঘাটিনা পালপাড়া এলাকায় ফুলজোড় নদী থেকে গত বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) রাজশাহীর বোয়ালিয়া ও চারঘাট উপজেলার দু’জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশগুলো ভাসমান হওয়ায় এ থানায় মামলা হয়নি। শুধু জিডি করে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে।’

    জানতে চাইলে পিবিআই-এর সিরাজগঞ্জ ইনচার্জ (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) এসএম তারেক রহমান বলেন, ‘রংপুরের মহাসড়কের পাশে ট্রাকচালক আল-আমিন ও হেলপার সোহেলকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। তাদের লাশ একটি ভুট্টা বোঝাই ট্রাকে করে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি তদন্ত করছে পিবিআই। শিগগিরই অপরাধীরাও ধরা পড়বে।’

    অন্য খবর  দোহারে পূজার বাজার জমজমাট

    সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. ফোরকান শিকদার বলেন, ‘অপরাধ করার পর আলামত বা গোপন করার চেষ্টায় অপরাধীরা তাদের পছন্দমতো জায়গায়ই ফেলবে, এটাই স্বাভাবিক। খুন করছে রংপুরে আর আলামত ফেলে দিচ্ছে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে। অপরাধীরা যতই চতুর হোক না কেন, অপরাধের পর তারা অজান্তে বা অগোচরে এমন ভুল করবে, সেজন্য তারা শেষপর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরাও পড়ে।’

    আপনার মতামত দিন