১৮আগষ্ট, ২০০৬।
সদ্য SSC পাস করে ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক এ ভর্তি হইছি।সোবহানবাগ মসজিদ এর পাশে থাকি।
১৫ ই আগষ্ট এর প্রোগ্রাম এ ধানমন্ডি -৩২ নম্বরে আওয়ামী এর সবনেতাকর্মীরা উপস্থিত।
এর পরবর্তী হরতালে রাসেল স্কয়ারে ট্রাক এর উপর অস্থায়ী মঞ্চে আপনাকে প্রথম সামনাসামনি দেখা।সেই দিন আপনার জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রথম শুনেছিলাম। এর পর থেকে তৎকালীন সরকার বিরোধী প্রতিটি প্রোগ্রামে রাসেল স্কয়ারে মধ্যমনি ছিলেন আপনি। রাসেল স্কয়ারের প্রতিটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা তখনকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক মোর্সেদ কামাল ভাই তার বিশেষ ভঙ্গিতে আপনার আগমনের ঘোষণা দিতেন। আপনার সেই বিপ্লবী বজ্রকন্ঠ শোনার অপেক্ষায় থাকতো আমার মতো হাজারো স্রোতা,রাসেল স্কয়ারে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ সহ ছাত্রলীগের হাজারো নেতাকর্মী। আমার কাছে ছিলেন আপনি কিংবদন্তী।
ওই সময় টা ছিলো তৎকালীন বিএনপি জামাত জোট সরকার এর শেষ সময়। তাই সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রায়ই হরতাল কর্মসূচি পালন করতে হতো। সাথে ছিলো তৎকালীন এম এ আজিজ এর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এর আন্দোলন। প্রতিটা আনদোলনে আপনার আগমনের অপেক্ষায় থাকতাম আমরা।আমার স্পষ্ট মনে আছে,একদিন হরতাল কর্মসূচি পালন করতে আপনি যখন রাসেল স্কয়ারে অবস্থান করেছিলেন তখন অনেক নেতাকর্মীদের সাথে আমিও ছিলাম। পুলিশ সেইদিন মারমুখোমুখি আচরণ করছিলো। সেইদিন পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ এ আব্দুস সাত্তার (সাবেক সাংসদ ময়মনসিংহ) সাহেবের পিঠ কেটে গিয়েছিলো।সেইদিন তাকে সহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বাচাতে আপনি বুক চিতিয়ে সামনে গিয়ে বলেছিলেন, “কোন নেতা কর্মীর শরীরে আঘাত করার পূর্বে আগে আমাকে আঘাত করতে হবে”। সেই দিন আপনার এই বজ্রকন্ঠের সামনে তৎকালীন প্রশাসন এর ভিত কেপে উঠেছিলো। আপনি নিজ উদ্দোগে আহত প্রতিটি কর্মীর চিকিৎসা ব্যাবস্থা করেছিলেন। পরম স্নেহে যাদের মাথায় হাত বুলিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আর অবাক হচ্ছিলাম এই ভেবে যে এতো বড় একজন নেতা, যে কিনা সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সে এতটা নিরহংকারী হয় কিভাবে??
আপনার মধ্যে কখনো কোন অহংকার দেখিনি। সেটা আর একটি ঘটনার মাধ্যমে আবার প্রমাণ পাই।২০০৬ সালের রমজান মাসের একদিন সোবহানবাগ কমিউনিটি সেন্টার এ মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ এর ইফতার মাহফিল ছিলো। তখন সেই কমিউনিটি সেন্টার এর সিকিউরিটি গার্ড ছিলো রমজান আলী। সে আপনাকে দেখে আপনার সাথে করমর্দন করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে আপনি বিনা সংকোচে তাকে বুকে জরিয়ে ধরেছিলেন। ইফতার শেষে বেরিয়ে যাবার সময় আপনি কমিউনিটি সেন্টার এর প্রতিটি মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন আলাদা করে।সেই দিন আপনার সরলতা দেখে মুগ্ধ হয়ে ছিলাম।
১/১১ তে গ্রেফতার হবার আগপর্যন্ত রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগ এর প্রতিটি প্রোগ্রাম সফল ভাবে পালন করে গেছেন আপনি। তখন দল ক্ষমতায় ছিলো না।তাই আপনার মতো বজ্রকন্ঠ নেতারা রাজপথে থেকে দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করে গেছেন।
আপনি ওই সময় একবার ব্রেণ স্ট্রোক করে আপনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন সেইবার দেশবাসীর ভালোবাসা আপনাকে সুস্থ করে তুলেছিলো।কিন্তু এইবার আপনি মৃত্যুর কাছে হার স্বীকার করে নিলেন।
আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি করি।আপনি স্বাস্থ্য মন্ত্রী। ফার্মেসী বিভাগের একটা প্রোগ্রামে আপনি এসেছিলেন। তখনও দেখেছিলাম আপনার আন্তরিকতা।
চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক হিসেবে আপনার ভুমিকা জাতি চিরকাল স্বরনে রাখবে।আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপনার বজ্রকন্ঠ সবসময় আমাদের বুক চিতিয়ে বাচতে শিখিয়েছে। আপনি একজন আপাদমস্তক অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।
মহান জাতীয় ৪ নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলীর পুত্র হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
আপনার বজ্রকন্ঠ আর শুনতে পারবো না এটা ভেবেই মন ভেঙে যাচ্ছে। আপনার মতে বজ্রকণ্ঠ নিয়ে হয়তো কেউ আর অসম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বলবে না।
বিনম্র শ্রদ্ধা প্রিয় নাসিম ভাই।জনতার নাসিম ভাই।অসম্প্রদায়িক নাসিম ভাই। পরপারে ভালো থাকবেন।
দেব
এসআই
সূত্রাপুর থানা