নিউজ৩৯; তারেক রাজীবঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সভানেত্রি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে নৌকা প্রতীক নিয়ে ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।শনিবার সন্ধ্যায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে হোটেল সোনারগাঁয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ সবাই আমাকে ধরেছে-আপনাকে এমপি হওয়া দরকার। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ঠিক আছে এবার আমি দাঁড়াবো। আগামী নির্বাচনে নেত্রী চাইলে আমি আওয়ামী লীগ থেকে দাঁড়াচ্ছি। আসুন সম্মিলিতভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা- ১ সিটটা উপহার দেই।’
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে সবাই একই পরিবারের লোক। পরিবারের সদস্য হিসাবে আমি আপনাদের ভালোবাসা, আন্তরিকতা, দোয়া ও সর্বপরি সহযোগীতা চাই। আমি কেন্দ্র বিশেষে ১৭৮টি উঠান বৈঠক করবো, আমি চাই সেসব বৈঠকে আপনাদের সক্রিয় সহযোগীতা। আপনারা প্রত্যেক ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইবেন, আপনাদের সহযোগীতা ছাড়া আমার পক্ষে তা কষ্টসাধ্য। তাই, আপনারা আমাকে জয়ী করে সম্মিলিতভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা- ১ সিটটা উপহার দিন।
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকো তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো ১৯৭২ সালে । বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা এবং ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান । বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নাম। তিনি ১৩০ কোটি ডলারের মালিক।
২০০১ সালের নির্বাচনে সালমান এফ রহমান প্রায় ২৩০০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ভাতিজা নাজমুল হুদার কাছে। অবশ্য আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ সে নির্বাচনে সালমানকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকে। যেটি তার নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলেও তিনি নিজে মানেন।আর এবার ভাতিজা নাজমুল হুদা নিজেই তার জন্য নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন তথা দোহার-নবাবগঞ্জে প্রচারিভিযানে থাকছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক রকম দোহারে অবাঞ্চিত হয়ে পড়েছিলেন সালমান এফ রহমান। দোহারে প্রবেশ নিয়ে তিনি বার বার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরকে নিয়ে দোহারে প্রবেশ করতে গিয়ে হয়েছেন হামলার শিকার। আর সে সময় বেক্সিমকো গ্রুপও অতিক্রম করে ব্যবসায়িকভাবে সবচেয়ে ক্রান্তিকাল।
২০০৬ সালে শেষ বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে এসেছিলেন দোহারে। তারপর সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় দেশের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সাথে তিনিও আটক হন সেনা সমর্থিত সরকারের হাতে। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ছাড়া পান জেল থেকে। কিছু দিন ব্যবসায় নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ও রাজনীতি থেকে দূরে থাকায়; দূরে ছিলেন দোহার থেকেও।
কিন্তু টানা ২য় বারের মতো ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় রাজনীতিতে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে আবির্ভূত হন সালমান এফ রহমান। মনোনীত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা প্যানেলে। শেখ হাসিনার বেসরকারী বিনোয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পান এই ব্যবসায়ী।
ফলে রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগে সক্রিয় না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর বড় ভাই শেখ কামালের বন্ধু – সালমান এফ রহমান পরিনত হন বাংলাদেশে সরকারের অন্যতম শীর্ষ প্রভাবশালী এক ব্যক্তিতে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে তাকে প্রায়ই দেখা যেত রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে।
ইতঃমধ্যে পদ্মা বাধ, দোহার রক্ষা বাধ, বিভিন্ন রাস্তা ও স্কুল-কলেজের সংস্কারসহ অবকাঠামো নির্মাণে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। এছারা দোহারকে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হিসাবেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিয়মিত তিনি সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকছেন, দোহার নবাবগঞ্জে পরিদর্শনে আসছেন।