কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
হৃদয় কন্দরে হতাশার জমাট অন্ধকার
ক্ষুধার মানিক খোঁজে পথ, কোথায় পথ,
আহার্যের এক টুকরো রুটির ঠিকানা!
বিড়ম্বিত জীবনের অনন্ত জিজ্ঞাসা-
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা।
আমি ক্ষুধার্ত, জঠর জ্বালায় ছুটে যাই উচ্ছিষ্ট রুটির সন্ধানে
কোথায় সাহেব-বিবির বালাখানা
ডাস্টবিনে আবর্জনার সাথে মিশে থাকা রুটির টুকরো
এবং উচ্ছিষ্ট সালুন,
আমি ছুটে যাই হোটেলে হোটেলে
কোথায় পরিত্যক্ত ভাতের ফ্যান
বাঁচার তাগিদে ছুটে যাই
শুধু খেতে চাই
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
আমি মানুষ! আমার বিশ্বাস হয় না
সভ্যতার বিংশুতি যুগে আমার পরনে বস্ত্র নেই
রাতে ফিরার মতো এক টুকরো চলার ঠিকানা
খাবারের বাসন যা প্রয়োজন প্রত্যহ মানুষের
আমার তা নেই।
আমার রাত্র কাটে খড়কুটোয় প্রত্যহ নতুন আস্তানায়
আমার শীতের কাঁথা আঁধারের কালো কুজ্ঝটি
বুকের ক’খান হাড়ে চাপা পড়ে থাকা প্রাণ
মানে না নিয়ন্ত্রণ।
স্নায়ুতে স্নায়ুতে আনে কঠোর যন্ত্রণা
বিংশুতি যুগে আমি মানুষন এ আমার বিশ্বাস হয় না।
হায়রে জীবন, এটাই যদি জীবন হয়
এমন জীবন চেয়েছিল কারা?
সভ্যতার উষালগ্নে আমার মনে আদিম প্রবৃত্তি
খাবারের জন্যই কেবল ব্যস্ততা
যেখানে যা কিছু পাই
কেবল খেতে চাই।
ইচ্ছে হয় সভ্যতার বেড়াজাল অগ্রাহ্য করে
আদিম হিংস্রতায় ফিরে যাই;
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা,
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
দুটি মন
ও পাড়ার মেয়েটির শাড়ির আঁচলে
কখন যে বাঁধা পড়ে প্রজাপতি মন
যতো চাই সরে যেতে- ডেকে ডেকে বলে,
ওরে তুই হতভাগা, দাঁড়া কিছুক্ষণ।
সবুজ ঘাসের বনে প্রজাপতি ওড়ে
বিকেলের লাল রোদে রাঙানো অধর,
ও পাড়ার শ্যামলিনী ডাক দেয় দূরে,
হাত নেড়ে ডেকে কয়- আয়, বাঁধি ঘর।
নীড়হারা মন বলে, ধীর পায়ে চলো
ক্লান্তিতে ভরে গেছে অলস অধর
মেয়েটিরে ফিরায়ো না, ওরে কিছু বলো
এমনি তো কেটে গেলো তিরিশ বছর।
ঘরভাঙা মাছরাঙা গাংচিল পাখি
রঙিন মাছের বুকে মেরেছে ঠোকর
প্রজাপতি-মন মোর, নিমীলিত আঁখি
ডেকে কই- ঘরভাঙা, আয়, বাঁধি ঘর।
গাংচিল ডেকে কয়- ঘরমুখো হবি!
সহসা গুটিয়ে পাও মেলে দিয়ে পর
ডেকে ডেকে কয়ে গেলো- ফিরে যাও কবি
কেন আর পিছু ডাকো, কোথা পাবো ঘর!
এ অসীম শূন্যতা, ঘরভাঙা ঝড়
এমনি তো কেটে যায় হাজার বছর।