ঢাকার নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা দখল, বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিকাজে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো ফলাফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
নদীপাড়ে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার শিকারিপাড়া ইউনিয়নের ইছামতি নদীর কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ থেকে শিকারিপাড়া বাজার হয়ে বারুয়াখালী বাজার বাহেচর-বক্তারনগর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার জায়াগা দখল করে নেয়া হয়েছে। এখানে অন্তত আটটি অংশে বাঁশ ও জালের আড়াআড়ি বেড়া দিয়ে মূল নদি আটকে দেয়া হয়েছে। গত তিন বছর নদী আটকে মাছ চাষ করছেন উপজেলার শিকারিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুর রহমান খান পিয়ারা ও তার সহযোগীরা। এতে নদীতে সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিকারিপাড়া, বক্তারনগর, দাউদপুর, খানেরপুর, বান্দুরা গ্রামের পেশাদার মত্স্যজীবী ও সাধারণ মানুষ। ওইসব এলাকায় ইছামতি নদীর ওপর নির্ভরশীল শাখা খালে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষি উৎপাদনে সেচের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আরো জানান, গত ডিসেম্বরে বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত নদী থেকে বাঁশের বেড়া ও জাল উচ্ছেদ করেছিলেন। কিন্তু নদী ঘিরে আবারো মাছ চাষ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিকারিপাড়া ইউনিয়নের কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া এ নদীতে অসংখ্য মোটা বাঁশ পুঁতে ও জাল দিয়ে দখল করে নেয়া হয়েছে।
শিকরিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, আমরা নৌপথে পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য করি। নদী আটকে (দখল করে) মাছ চাষ শুরু করায় আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জানান, নদী দখল করে মাছ চাষ করায় তারা এখন পানিতে নামতে বাধা দেয়। ফলে আমাদের দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ নদীর বিভিন্ন অংশে নৌ-চলাচল প্রতিবন্ধক অপসারণ করলেও আবারো জাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদী দখলমুক্ত করতে গ্রামবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, জেলা মত্স্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক বরাবর দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
শিকারিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুর রহমান খান পিয়ারা জানান, নদীর মুখে বাঁধ থাকায় এখন নদীটি মৃত। বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। মত্স্যসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা নিয়েই এখন মাছ চাষ করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আহসান জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষের অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।