বিজ্ঞান ডেস্ক ♦ গ্রীনহাউজ ইফেক্ট সম্বন্ধে আমরা সবাই মোটামুটি জানি। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড এর উপস্থিতি এর জন্য দায়ী সেটাও আমরা সবাই জানি। তবে যে বিষয়গুলো সবাই জানে না সেগুলো অবগত করাই আজকের লেখাটির উদ্দেশ্য।
কার্বন-ডাইঅক্সাইড ছাড়াও গ্রীনহাউস ইফেক্টের জন্য দায়ী বেশ কিছু গ্যাস রয়েছে। এগুলো হচ্ছে মিথেন(১৯%), ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বন(১৭%), ওজোন(৮%), নাইট্রাস অক্সাইড(৪%), জলীয় বাস্প(২%)। বন্ধনীর ভিতরে লেখা সংখ্যাগুলো দ্বারা গ্রীনহাউজ ইফেক্টের জন্য কোন গ্যাস কতটা দায়ী সেটা দেখানো হলো। কার্বন-ডাইঅক্সাইড একা ৫০% দায়ী। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে গ্রীনহাউজ ইফক্টের জন্য কার্বন-ডাইঅক্সাইড একা দায়ী নয়। এর পাশাপাশি আরো কিছু গ্যাসের দায়িত্ব আছে।
মিথেন:আমরা রান্না-বান্নার কাজে কিংবা সিনজি হিসেবে যে গ্যাস ব্যবহার করি সেটাই মিথেন গ্যাস। মাটির নীচে পোট্রোলিয়াম থেকে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি হয় আবার জলাভূমির তলদেশ থেকেও অনেক সময় মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। গবাদি পশুর গোবর মিথেন গ্যাসের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এই গোবর থেকেই বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়। প্রতিবছর গরুর গোবর থেকে বিপুল পরিমান মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলে নিঃসৃত হয়ে গ্রীন হাউজ ইফেক্টের পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন: এটা CFC বা ফ্রেয়ন নামেও পরিচিত। এটা ওজন স্তর ধ্বংস করে সে ব্যাপারে অনেকেই অবগত। কিন্তু গ্রীনহাউজ ইফেক্টেও এর ভূমিকা কম নয়। একসময় এরোসল এবং রেফ্রিজারেটরে শীতলকারক হিসেবে CFC ব্যবহার করা হত। তবে বর্তমানে এর ক্ষতিকর প্রভাব অনুধাবন করায় এবং বিকল্প আবিষ্কৃত হওয়া নিঃসরনের পরিমান কমেছে।
ওজোন: এটা অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। সাধারন অক্সিজেন গ্যাসের অনুতে দুটি অক্সিজেন পরমানু থাকে, কিন্তু ওজোন অনুতে তিনটি অক্সিজেন পরমানু থাকে। বায়ুমন্ডলের ওজোন-স্তর গঠিত হয় ওজোন দ্বারা। এটা সূর্য থেকে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি শোষণ করে আমাদেরকে রক্ষা করে। তবে গ্রীনহাউজ ইফেক্টের জন্য কিছুটা অভিযুক্ত।
নাইট্রাস অক্সাইড: নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের একটি যৌগ। বজ্রপাতের সময় বাতাসের অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
জলীয় বাস্প: পানির গ্যাসীয় রূপ। মেঘ সৃষ্টি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়।
তবে গ্রীনহাউজ ইফেক্ট নিজের গ্রীনহাউজ ইফেক্টের জন্য অনেকাংশে দায়ী! এই ব্যাপারটা কয়েকভাবে ঘটতে পারে।
প্রথমত, পৃথিবীর দুই মেরুতে এবং সুউচ্চ পর্বত-শৃঙ্গগুলোতে বিপুল পরিমান বরফ সঞ্চিত আছে। এই বরফের পৃষ্ঠগুলো বেশ মসৃন এবং এর ফলে বরফপৃষ্ঠ বেশ ভালো প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে। ফলে সূর্য রশ্মির বেশ বড় একটা অংশ এই বরফপৃষ্ঠগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে যদি বরফ গলতে থাকে তাহলে এই প্রতিফলনের হার কমে যাবে এবং সূর্যরশ্মি আর আগের মত ফিরে যেতে পারবে না এবং সেই রশ্মি পৃথিবীতে শোষিত হয়ে উষ্ঞতা বাড়িয়ে দেবে।
দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর মহাসাগরগুলো কার্বন-ডাইঅক্সাইডের সিংক হিসেবে কাজ করে। বাতাসের কার্বন-ডাইঅক্সাইড সগরের পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসে এই গ্যাসের উপস্থিতি কম রাখতে সাহায্য করে। সাগরের গভীরে গিয়ে এই গ্যাস চুনাপাথর তৈরি করে এবং কঠিন পাথর হিসেবে সঞ্চিত থাকে। তবে বর্তমানে এত বেশী পরিমানে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হচ্ছে যে মহাসাগরে দ্রবীভূত হওয়ার চেয়ে বাতাসে আগমনের হার অনেক বেশী। ফলস্রুতিতে পৃথিবীর উষ্ঞতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর উচ্চ তাপমাত্রার পানিতে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের দ্রবণীয়তা হ্রাস পায়। ফলে মহাসাগর গুলো কার্বন-ডাইঅক্সাইড সিংক হিসেবে আর ফলপ্রসুভাবে কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ গ্রীনহাউসের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, তাপমাত্রা যত বাড়বে পানির বাষ্পীভবনের হারও তত বাড়বে। ফলে গ্রীনহাউজ ইফেক্টে জলীয় বাষ্পের প্রভাবও বেড়ে যাবে। তাছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকবে পৃথিবী থেকে বিকিরিত রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত কমতে থাকবে। আর জলীয়বাষ্প অপেক্ষাকৃত কম তরঙ্গদৈর্য্যের বিকিরন বেশী শোষণ করে।