দোহারে ফসলি জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইট ভাটায়

179
দোহারে ফসলি জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইট ভাটায়

ঢাকার দোহার উপজেলায় প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ইটভাটা। বেশিরভাগই ইটভাটা ফসলি জমির আশপাশে। এ কারণে ফসলি জমির উর্বর মাটি দেদার বিক্রি হচ্ছে ভাটায়। ফসলের জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটায়।

দোহার উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। দিনে দিনে আরও নতুন ইটভাটা তৈরির চেষ্টাও চলছে। এই ইটভাটাগুলোর ইট তৈরীর জন্য ফসলের জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়। এসব ভাটায় যাচ্ছে উপজেলার আড়িয়ল বিলের, মৌড়া, নারিশা, সুতারপাড়া, জালালপুর, নিকড়ার চক, রসুলপুর চক, মাঝিরকান্দার চক, মাহমুদপুর ইউনিয়নের চক এলাকার দোহ ফসলি জমির মাটি।

সরেজমিন দেখা যায়, কৃষককে অধিক বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে বা কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে ভায় দেখিয়ে ভেকু দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা। এতে জমির উর্বরতাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। কেউই বা মুখ খুললে তর বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। এই ভয়ে কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে না। আর এই কারণে ফসলি জমি নষ্ট করার কারণে খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। মাহিন্দ্রা ও ট্রাকে করে এসব মাটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সড়কগুলোও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এভাবে ফসলি জমির মাটি অবাধে কেটে ইটভাটায়। বিক্রি হলেও চোখে পড়ছে না প্রসাশনের। এ ভাবে আগামী ১০-১৫ বছর এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, মাটি ব্যবসায়ীরা ও ইটভাটার লোকজন দরিদ্র কৃষকদের ফসলি জমির মাঠে গিয়ে ভয়ভীতি দেখান। সামান্য কিছু টাকার বিনিময় বড় বড় গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে নিয়ে যান। ফলে এই অঞ্চলে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

অন্য খবর  দোহারের নারিশা বাজারে অগ্নিকাণ্ড

দোহার উপজেলায় মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ও জাহাঙ্গীর ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি সাথে কৃষি জমি এখান থেকে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হত। কিন্তু এখন লিটন দেওয়া, সবুজ দেওয়ানা,আশরাফ দাওয়ান এরা এই স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে ইটভটায় বিক্রি করতেছে। ব্যনা আসলে আমাদের ঘর ভেঙে যেতে পারে সে জন্য আমরা তাদেরকে নিষেধ করেছি কিন্তু তারা শুনে না। পরে আমরা আমাদের এখানের মহিলা মেম্বার মাকসুদার কাছে বিষয় টা জানিয়েছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

তারা আরো বলেন, এখান থেকে নদী পযন্ত প্রায় পাঁচ একরের মত কৃষি জমির উপরের অংশ কেটে নিয়ে গিয়েছে। আমরা বাঁধা দিলেও তারা শুনছে না।

ঐস্থানের আরেক জন বাসিন্দা বিল্লাল বলেন, গত বছর আমার জমি কেটে নিচ্ছিল ইটভাটায় আমি তখন পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করি। পরে পুলিশ ঘটনা স্থলে আসে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আর এখন আমি কিছু বলতে পারবো না আমি গতবার অভিযোগ করেছি বলে আমাকে দেখেলেই তারা কিটি সাইজ করে। রাস্তা ঘাটে উল্টো পাল্টা কথা বলে।

সুফিয়া আক্তার বলেন, এখান থেকে যে ভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায় তাতে মনে হয় কৃষি জমি আর থাকবে না। এখানে যে ইট ভাটা দিয়েছে এটা কারনে আমাদের গাছের ফল হয় না। গাছে নারিকেল হয় কিন্তু পানি হয় না ডব অবস্থায়ই শুকিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, এই ইট ভাটায় ডিসি, উপজেলা প্রশাসন আসে কিন্তু কোন কিছুই হয় না।

অন্য দিকে জমির মালিক রেহেনুমা বলেন, আমার জমির মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে ফেলেছে। এখন আমার জমি পুকুরে পরিনত হয়েছে। ইউএনও আসে যায় কিন্তু আমি আমার জায়গায় বুঝে পাচ্ছি না।আমি আমার জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের কাছে দরখাস্ত দিয়ে ছিলাম তাতেও কোন কাজ হয়নি।

অন্য খবর  দোহারে পদ্মা নদীর ড্রেজিং ও তীররক্ষাসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন; সালমান এফ রহমানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ধন্যবাদ

এবিষয়ে মাহমুদপুর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার মাকসুদা বেগম বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠো ফোনে কয়েক বার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দোহার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব বলেন, এটি ভূমি মন্ত্রলায়ের বিষয় আমাদের না। তবে আমাদের পরামর্শ দেওয়া আছে কোন জমিতে কি করা যাবে আর যাবে না সে বিষয়। কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয় জানতে চাই তিনি বলেন এতে কৃষি জমি তার উবরতা হারাচ্ছে। তবে এই জমি হয়তোবা আবার ঠিক হয়ে যাবে।

মাটি কেটে নেওয়ার বিষয় সবুজ দেওয়ানা এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হা আমি মাটি কাটাছি তবে আপনি যেটা দেখেছেন সেটা না, আমি আমার জমি ও আমার ভাইয়ের জমি কেটতেছি। আনরা এখানে মাছের খামার বানাবো। এখানে আমাদের দুই ভায়ের ২১০ ফিট জমি আছে।

কৃষি জমির উপরের মাটি কাটার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পুকুর খনন করবো সে জন্য সব মাটি এখানে ধরবে না তাই আমরা ইট ভাটায় বিক্রি করে দিয়েছি। নিচের যে মাটি আছে সেটা দিয়ে আমরা পাড় বাঁধাই করে পুকুর খনন করবো।

তিনি আরো বলেন, ইটভাটার মালিকানায় আমিও আছি। ইট ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে বলেন হা আমাদের ইটভাটার সব ধরনের কাগজ পত্র আছে এমনকি ডিসি অফিসেরও অনুমতি আছে।

এবিষয়ে দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করবো। আর যারা অবৈধ ভাবে মাটি কাটবে তাদেরে বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।

আপনার মতামত দিন