দোহার-নবাবগঞ্জে ১ কেজি চালের দামে ১ কেজি তরমুজ

210
দোহার-নবাবগঞ্জে ১ কেজি চালের দামে ১ কেজি তরমুজ

ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। যার ফলশ্রুতিতে এক সময়ের সকল শ্রেণীর মানুষের ফল হিসাবে পরিচিত এই ফলটি হয়ে গেছে শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ফল। কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পিস হিসাবে কিনে আনা তরমুজ গত কয়েকদিন ধরে হটাত করেই বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসাবে। অথচ ১০ রোজা পর্যন্ত তরমুজের বাজার স্বাভাবিকই ছিল। হটাত করে এই বিক্রির ধরন বদল ও দাম বৃদ্ধির কারন হিসাবে বাজার সিন্ডিকেটকেই দায়ি মনে করছেন সাধারন মানুষ।

যে পদ্ধতিতে ক্রয় সেই নিয়মেই পণ্য বিক্রির বিধান রয়েছে ভোক্তা অধিকার আইনে। কৃষক থেকে পাইকাররা পিস হিসাবে তরমুজ কেনেন। পাইকার দাবি অনুযায়ী তারাও ঠিক একইভাবে বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ও অবৈধ মুনাফা লুটার জন্য তরমুজ বিক্রি করছেন কেজিতে। ফলে ১০ রোজার সময় ১০ কেজি ওজনের যে তরমুজটার দাম ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সেই তরমুজটার দাম হটাত করেই লাফ দিয়ে বেরে হয়েছে ৬০০ টাকা। এই দ্বিগুন দামের কারন খোলসা করে বলতে পারেন নি কোন ক্রেতারা। দাম বৃদ্ধি পেলে পন্যের যোগান কমে যাওয়ার কথা থাকলেও বাজারে তরমুজের কোন অভাব নেই। চাহিদার তুলনায় যোগানের পরিমান বেশি থাকলেও কেন এই দাম বৃদ্ধি তার কোন ব্যাখ্যা অর্থনীতির ভাষায় নেই।

অন্য খবর  ১৯১২ সাল থেকে দোহার-নবাবগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে যারা

তবে খুচরা বিক্রেতারা এই দাম বৃদ্ধি ও কেজি অনুযায়ী তরমুজ বিক্রির পুরো দায় চাপিয়েছেন পাইকারী ও কৃষকদের উপর। তাদের মতে আড়তে ও কৃষকদের কাছ থেকে তরমুজ কেজি দরে কিনতে হচ্ছে দেখেই তারাও বিক্রি করছেন কেজি হিসাবে। কিন্তু এর বিপরিত চিত্র পাওয়া গেছে ঢাকার সোয়ারীঘাট ফলের আড়তে। সেখানে এখনো তরমুজ বিক্রি হচ্ছে পিস হিসাবে। এবং সেটা স্বাভাবিক সময়ে যে দামে বিক্রি হয় সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। পুরো বিষয়টিকেই খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি বলছেন পাইকার আর তরমুজ চাষিরা। এ বছরই প্রথম এই পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি চলছে সারা দেশে। কী করে এই সিন্ডিকেট তৈরি হলো তারও কোনো উত্তর মিলছে না। মাঝখান থেকে দেশেই উৎপাদিত এই সুমিষ্ট ফলটির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নেছার সরদার বলেন, ‘আমি ১৩ একর জমিতে এবার তরমুজ করেছি। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও শর্ত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করেছি পাইকারের কাছে। ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের একশ’ তরমুজের দাম পেয়েছি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এর চেয়ে বড় অর্থাৎ ৮-১০ কেজি ওজনের তরমুজ ক্ষেত থেকে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।’ হাসান এবং নেছার সরদারের দেওয়া তথ্যেই উৎপাদক পর্যায় থেকে তরমুজ বিক্রি হওয়ার তথ্য মিলেছে দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলা উপজেলায়। এই দরের সঙ্গে মোটামুটি মিল রয়েছে পাইকারি বাজারেও।

অন্য খবর  দোহার থানা পাহারা দিচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিক্রির পদ্ধতি সম্পর্কে আইনে কিছু বলা না থাকলেও পাইকারি দরের চেয়ে খুচরা বাজারের দরে কতটা পার্থক্য থাকতে পারে তা স্পষ্ট বলা আছে। তরমুজের ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেটা পুরোপুরি বেআইনি। দামের এতটা পার্থক্য করে পণ্য বিক্রির কোনো বিধান ভোক্তা অধিকার আইনে নেই।’

দোহারের শুধু জয়পাড়া বাজার নয়, বাংলাবাজার, কার্তিকপুর বাজার, মেঘুলা বাজার, নারিশা বাজার, ফুলতলা বাজারেও তরমুজ বিক্রি হচ্ছে অবৈধ কেজি দর হিসাবে। নবাবগঞ্জের ঘোষাইল, বান্দুরা, নবাবগঞ্জ বাজার, বাগমারা বাজার, বাহ্রা বাজার, আগলা বাজারেও তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। এই ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন যেমন কেরানীগঞ্জে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে, দোহার উপজেলা প্রশাসনও অচিরেই এই তরমুজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন বলে আসা করে দোহার উপজেলার জনসাধারন।

আপনার মতামত দিন