১৯১২ সাল থেকে দোহার-নবাবগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে যারা

1229
১৯১২ সাল থেকে দোহার-নবাবগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে যারা

 

নবাবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বান্দুরা হলিক্রশ স্কুল এন্ড কলেজ সুনামের সঙ্গে ১০৪ বছর যাবত্ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ সকল ক্ষেত্রেই সাফল্য বজায় রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে অর্জন করেছে জাতীয় ও উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব।

প্রতিষ্ঠানটির মোট ভূমির পরিমাণ পাঁচ একর হলেও ১.৯৭ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। ১৯১২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৪ সালে এসে কলেজ শাখার যাত্রা শুরু করে। বান্দুরা স্কুল এন্ড কলেজে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭শ’ ৪২জন। এর মধ্যে স্কুল শাখায় ১ হাজার ৬শ’ ৩৭ জন ও কলেজ শাখায় ১০৫ জন রয়েছে। তাদের শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রায় ৫৩ জন শিক্ষক। প্রায় ৩০টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

১৯১২ সালের ৮ জানুয়ারি বর্তমান গোল্লা ধর্মপল্লী প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৫৭ জন ছাত্র নিয়ে হলিক্রশ বান্দুরা গোবিন্দপুর হাই স্কুল নামে যাত্রা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আইরিস বংশোদ্ভূত ক্যাথলিক ধর্মযাজক রেভারেন্ড ফাদার জন হেনেসি। ঢাকা মহাধর্ম প্রদেশের দ্বিতীয় হাই স্কুল এটি। নানা অসুবিধা ও সমস্যার মধ্যে দিয়ে গোল্লায় মাত্র পাঁচ মাস ক্লাস চলে। ওই বছরেরই জুন মাসে স্কুলটি বান্দুরায় স্থানান্তরিত হয় এবং একই মাসের ১১ তারিখ থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। ১৯১৫ সালে দশম শ্রেণি চালু করা হয় এবং তিন বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলটিকে অস্থায়ীভাবে অনুমোদন দেয়। ১৯১৬ সালে প্রথমবারের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছয়জন ছাত্রের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা হয়। ১৯১৮ সালের ২০ নভেম্বর স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃত লাভ করে। দোহার-নবাবগঞ্জের সর্বপ্রথম স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্কুল এটি।

অন্য খবর  মোনেম মুন্না: স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া তারকা

১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ব্রাদার জন ষ্টিফেন এমিঞ্জার। তার সময়কালে বিদ্যালয়ের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। তিনি বিদ্যালয়ের ১৮টি শ্রেণিকক্ষ ও ছয়টি আবাসিক কক্ষ বিশিষ্ট ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের চারপাশের প্রাচীর ও রঙ্গমঞ্চ তার আমলেই নির্মিত। ১৯৮৭ সালে তত্কালীন প্রধান শিক্ষক ব্রাদার বেনেডিক্ট রোজারিও’র সময় বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উত্সব করা হয়। ২০০৩ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ব্রাদার প্রদীপ লুইস রোজারিও। তার সময়ে বিদ্যালয়ের মূল ভবন সম্প্রসারণ করা হয় এবং পুরান প্রাচীর ভেঙে নতুন সুউচ্চ প্রাচীর করা হয়। এছাড়া অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার তারই অবদান। তার সময়েই ২০০১ সালে জাতীয় শিক্ষক সপ্তাহে স্কুলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূষিত হয়েছে বিদ্যালয়টি। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন ব্রাদার চন্দন বেনেডিক্ট গমেজ। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের ২১তম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ব্রাদার নিপু হিউবার্ট রোজারিও, সিএসসি। তার ও এলাকার গণ্যমান্যদের প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালের ১ জুলাই মাত্র ৪৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ে কলেজ শাখার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান কলেজ শাখার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৫জন।

অন্য খবর  দোহারে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনেঃ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয়ী সুজাহার ব্যাপারী

স্কুলটির প্রাক্তন ছাত্র ও দোহার-নবাবগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অপূর্ব হালদার বলেন, আমি আজ দোহার-নবাবগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হওয়ার পেছনে বান্দুরা হলিক্রশ স্কুলের অবদান শতভাগ। আমি যদি  ছোটবেলা  থেকে ওই স্কুলে পড়া-শোনা না করতাম তাহলে আজ এতদূর আসতে পারতাম না। তাই আমি আজ ধন্য।

আপনার মতামত দিন