জনগনের চোখে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০০ সালে পথ চলতে শুরু করে ছিল আমাদের দোহার পৌরসভা। ইউনিয়ন থেকে পৌরবাসিন্দা হয়ে তখন আমরা অনেকেই ছিলাম গর্বিত।
৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার প্রথম বারের নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগন নেয়ার পর এলাকার উন্নয়নে নামমাত্র যেসব ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তাতে আমরা ইউনিয়নবাসী হতে পৌরবাসী হয়ে কি লাভ বা সুবিধা পেলাম তা না এখনো বুঝতে পারি নি। কিন্তু উচ্চ পৌর করের কষাঘাত ভালমতই টের পাচ্ছি।
নানা সমস্যায় জর্জরিত আমরা এলাকাবাসী দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে পৌর নির্বাচন হবে, তখন অযোগ্য প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে আমরা নতুন যোগ্য পৌর প্রতিনিধি নির্বাচিত করব। কিন্তু জনপ্রতিনিধি পরিবর্তনের হাতিয়ার পৌর নির্বাচন আজ যেন সোনার হড়িনে রূপ নিয়েছে। যার পিছনে শুধু ছুটে চলা যায় কিন্তু ধরা যায় না।
প্রচলিত আছে যে, সুচিন্তিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচণায় কিছু লোক “সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায়” উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে আবং সেই মামলা বিচারাধীন থাকায় বহুদিন ধরে ঝুলে আছে আমাদের অনেক কাঙ্খিত পৌরনির্বাচন। কিন্তু সেই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রশাসনের কার্যকর কোন ভূমিকা নেই, স্থানীয় সংসদ সদস্যও নিশ্চুপ। অথচ মামলার অজুহাতে সাড়ে সতের বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ মেয়র-কাউন্সিলরদের দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে দোহার পৌরসভার কার্যক্রম। যার কারনে আমরাএলাকাবাসী বঞ্ছিত হচ্ছি নানা পৌর সুবিধা থেকে। ব্যাহত হচ্ছে এলাকার কাংক্ষিত উন্নয়ন।
সময় মত নির্বাচন না হওয়ায় পৌর প্রতিনিধিদের নেই জনগনের নিকট কোন জবাবদিহিতা। প্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারি মনোভাবে পৌর এলাকা আজ সমস্যা জর্জরিত জনপদ।
দোহার পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হলেও পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা রয়ে গেছে সেই নিম্ন শ্রেণিতেই। এখনো একটু বৃষ্টিতে পৌরবাসী পানি-বন্দী থাকে, শিশুদের জন্য নেই কোন বিনোদন পার্ক, নেই পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, হয়নি এলাকার কাঙ্খিত অবোকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি।
সময়ের পরিক্রমায় সরকার পরিবর্তন হয়, সংসদ সদস্য পরিবর্তন হয়, দোহার পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় হয়েও এক যুগ পেরিয়ে গেছে কিন্তু কী এক অজানা কারণে নির্বাচন হয় না। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে স্বার্থান্বেষী মহলও গিরগিটির মত রঙ বদলে মিশে যায় সরকারের রঙ্গে। থেমে থাকে নির্বাচন প্রক্রিয়া। জনগনের ভোটাধিকার হয়ে থাকে বাক্সবন্দি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের পৌরসভাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
জনগনের কাধে সিন্দাবাদের ভূত হয়ে বসে থাকা মেয়াদ উত্তীর্ন মেয়র-কাউন্সিলরদের দিয়ে যুগের পর যুগ খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলবে আমাদের পৌরসভা। আমরা শুধু অসহায় চোখে তা তাকিয়ে থাকব……!!!!
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: জয়পাড়া বাজারের ফাইল ফটো