মানবসৃষ্ট কারণে হুমকীর মুখে দোহারের নির্মাণাধীন বাহ্রা বাঁধ

1842
হুমকীর মুখে বাহ্রা বাঁধ

পদ্মার ভয়াল আগ্রাসী থাবায় গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে দোহারের অস্তিত্ব যখন সংকটের মুখে সেই তখন থেকে দোহারবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল আজকের এই বাহ্রা বাঁধ। বর্তমানে, নগরজীবন থেকে খুব কাছাকাছি প্রাণ খুলে শ্বাস ও প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য একসাথে উপভোগের জন্য মিনি কক্সবাজার তথা মৈনটের পাশাপাশি বাহ্রা বাঁধও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বাঁধের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ছোট বড় খাবারের দোকান।

কিন্তু এই হাজারো পর্যটক ও নদী পাড়ের কর্ম ব্যস্ততার ভিড়ে নির্মাণাধীন বাঁধটি কেমন আছে? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মাঠে নেমেছিল নিউজ ৩৯ এর প্রতিনিধি দল।

# বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় বেশ কয়েকটি বালুবাহী ও যাত্রীবাহী ইঞ্জিন চালিত নৌকা বাঁধের জিও ব্যাগের উপর দিয়েই ভেড়ানো অবস্থায় রয়েছে। এতে চাপের মুখে পড়ছে জিও ব্যাগ।

# ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকাগুলোর নোঙর জিও ব্যাগের সাথে লাগানো এবং অনেক স্থানে জিও ব্যাগের উপর দিয়েই নোঙর ফেলা হয়েছে। যেসব স্থানে নোঙর ফেলা হয়েছে সেসব স্থানে জিও ব্যাগ ফুটো হয়ে গিয়েছে।

অন্য খবর  দোহার–নবাবগঞ্জে মান্নান সমর্থকদের দোয়া দিবস পালন

# ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রান্তদেশের আঘাতে ফুটো হচ্ছে জিও ব্যাগ। যতবার একটি করে নৌকা ভিড়ছে ততবার নতুন করে একটি জিও ব্যাগ ফুটো হচ্ছে।

# নির্মাণাধীন বাঁধের জিও ব্যাগের উপর দিয়েই জনগণ বসছে। কেউ সিগারেটের শেষাংশ ফেলছে ব্যাগের উপর আবার কেউবা কাঠি দিয়ে জিও ব্যাগ ঘষছে। ছবিটি বাঁধের উপরের অংশ থেকে তোলা এবং খেয়াল করলেই বোঝা যায় কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ধারালো কিছু দিয়ে জিও ব্যাগটি কেটেছে।

# বাঁধের বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগের উপর মোটরবাইক পার্কিং করতে দেখা গিয়েছে। যে স্থানে পার্কিং করা হয়েছে সে স্থানেও জিও ব্যাগ ফুটো হয়ে গিয়েছে।

# বাঁধের নিচের দিকে পাড়ে আছড়ে পড়া পানির ধাক্কায় জিও ব্যাগ ভিজে যাচ্ছে এবং ব্যাগটি না শুকাতেই জনসাধারণ ব্যাগের উপর দিয়ে চলাচল করছে। বারংবার পায়ের চাপ পড়ায় জিও ব্যাগের ভেজা অংশটি এক পর্যায়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাঁধের বিভিন্ন যায়গা ঘুরে এরকম শতাধিক ফুটো দেখা গিয়েছে।

# ফুটো হওয়া স্থান দিয়ে জিও ব্যাগের অভ্যন্তরস্থ বালি বের হয়ে যাওয়ায় ব্যাগগুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে। স্রোতের টানে একপর্যায়ে ব্যাগগুলোকে খুঁজেই পাওয়া যাবেনা।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জ ইউএনও এর সরকারি নাম্বার ক্লোনের অভিযোগ

# পর্যটকদের ফেলে যাওয়া ময়লা বিভিন্ন স্থানে জমে দুষিত করছে নির্মাণাধীন বাঁধের চারপাশ।

# নির্মাণাধীন বাঁধের জিওব্যাগগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকায় নিচের সারির একটি জিওব্যাগ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার প্রভাব উপরের সারির প্রত্যেকটি জিও ব্যাগের উপরেই পড়বে। পানি বেড়ে স্রোতের টানে ক্ষতিগ্রস্থ জিওব্যাগগুলো ভাসিয়ে নিলে পুরো বাঁধই ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পড়বে।

দোহারবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ও সরকারের শতশত কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষন প্রকল্প মানবসৃষ্ট কারনে ও ব্যবসায়ীক স্বার্থে হুমকীর মুখে পড়লে এই দায়ভার কখনোই দোহারবাসী এড়িয়ে যেতে পারবেনা। বর্তমানে হাজারো পর্যটকের মাঝে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের থেকে নির্মাণাধীন বাঁধটি রক্ষা সম্ভব নয়। তাই নির্মানকাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জ্ঞানীজনেরা।

আপনার মতামত দিন