সুপারি গাছ: আকাশ থেকে ছুড়ে দেয়া তীর

3036
সুপারি গাছ
সুপারি গাছ: সিলেট বিভাগের কোথাও থেকে তোলা

বিখ্যাত ইংরেজ উদ্ভিদবিদ ড্যাল্টন হুকার (১৮১৭-১৯১১) যিনি সাত খণ্ডে ভারতীয় উপমহাদেশের গাছপালার বিবরণ লিখেছেন, তিনি সুপারি গাছকে বলেছেন “আকাশ থেকে ছুড়ে দেয়া ঈশ্বরের তীর”। বেশ লাগসই উপমা। অনেকটা তেমনই দেখায়। একটা লম্বা কাঠি, গেঁথে আছে মাটিতে, পেছনে একগুচ্ছ পালক। সুপারি এসেছে মালয়শিয়া থেকে। বাংলাদেশের সব যায়গাতেই দেখা যায়।  লোকে বাগানে খুব ঘন করে লাগায় যাতে সুপারি পাড়ার সময় না নেমে এক গাছ থেকে আরেক গাছে সহজে যেতে পারে। তাছাড়া সুপারি গাছের সারিও খুব সুশ্রী।  গাছ প্রায় ২০-২৫ মিটার লম্বা হয় ; গোলাকার কাণ্ডের ব্যাস ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি। চারা লাগানোর পর ৬-৭ বছরের মধ্যেই ফল ধরা শুরু করে। তবে বেশি ফল ধরে ১০-১২ বছরের পর থেকে।

ইংরেজী নাম : Betel Nut
দ্বিপদী নাম : Areca catechu

বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। এক সময় বিশ্ববাজারে সুপারির বার্ষিক চাহিদা আগে ছিল ৫০ হাজার টন।

পাকলে সুপারি হলুদ-কমলা রঙের, থোকায় থোকায় গাছের মাথায় ধরে থাকে। ভাল ফলন হলে একেক গাছে ৩০০ সুপারি ফলে। অনেকে সুপারি চিবান। কাচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলুদ বা কমলা হয়ে যায়।  খোসা ছাড়িয়ে ভিতরে সুগোল যে বিচি থাকে সেটাই খাওয়া হয়। এই বিচি শুকিয়েও খাওয়া হয়।

অন্য খবর  হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল

ফল ছাড়াও গাছের অনেক ব্যবহার আছে। বর্ষাকালে সুপারি গাছ দিয়ে সাকোঁ তৈরী করা হয়, গৃহনির্মানের ব্যবহৃত হয়। সুপারি গাছের পাতার খোল শিশুদের খেলার উপকরণ। খোল সহ ডাল দিয়ে গ্রামাঞ্চলে বাড়ীরে আবডাল তৈরী করা হয়।

এক সময় সারা দেশের মত দোহার ও নবাবগঞ্জেও প্রচুর দেখা যেত। প্রায় প্রতিটি বাড়ীর সীমানা চিহ্নিত করা হত সুপারি গাছের সারি দিয়ে। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, পার্বনে গাছের গোড়ায় দুই থেকে তিন ফুট চুনা দিয়ে সাদা রং করা হত। যদিও প্রচুর আছে তবু এখন সুপারি গাছের পরিমান আগের থেকে অনেক কমে গেছে। বাড়ীর সীমানায় এখন আর আগের মত সুপারি গাছ দেখা যায় না।

সুপারি গাছ
সুপারি গাছ : দোহারের উত্তর জয়পাড়া থেকে তোলা

প্রতি ১০০ গ্রাম সুপারিতে আছে ২৮৯ ক্যালরি শক্তি যোগানোর ক্ষমতা। সুপারির অনেক ভেষজ গুণও আছে। সুপারি ভেজে মিহি গুড়োঁ করে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা ও পায়োরিয়া সেরে যায়। ক্রিমি, রক্ত আমাশা, অজীর্ণ ইত্যাদি রোগ নিরাময়েও সুপারি উপকারী। তবে সুপারি এদেশবাসীর মুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ, এর রসে এরিকোলিন নামে উপক্ষার মুখের ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

তথ্যসূত্র:
দ্বিজেন শর্মা, গাছের কথা ফুলের কথা
উইকিপিডিয়া

আপনার মতামত দিন